চুল্লি ঘিরে রণক্ষেত্র রামঘাট

পুলিশকে পেটাল জনতা, সামলাতে শূন্যে গুলি

ফের জনতার হাতে আক্রান্ত পুলিশ। স্থানীয় রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির বিরোধিতায় এক দল বাসিন্দার আন্দোলনের জেরে বুধবার সকালে তেতে ওঠে শিলিগুড়ি পুর-এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড। পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের একাংশ নিরীহ মহিলাদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগে শিলিগুড়ি থানার আইসি-সহ পুলিশকর্মীদের মারধর করে। আইসি-র গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

শিলিগুড়ির রামঘাট শ্মশানে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

ফের জনতার হাতে আক্রান্ত পুলিশ।

Advertisement

স্থানীয় রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির বিরোধিতায় এক দল বাসিন্দার আন্দোলনের জেরে বুধবার সকালে তেতে ওঠে শিলিগুড়ি পুর-এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড। পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের একাংশ নিরীহ মহিলাদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগে শিলিগুড়ি থানার আইসি-সহ পুলিশকর্মীদের মারধর করে। আইসি-র গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে আইসি-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী শ্মশানের মধ্যে সাফাইকর্মীর ঘরে আশ্রয় নেন। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে, রবার বুলেট ছুড়ে এবং শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যায় এলাকার কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদব-সহ ২৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

গোলমালের সময়ে এ দিন কাঁদানে গ্যাসের শেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পূজা কেশরি জখম হয়। জনতার হামলায় ছ’জন পুলিশকর্মীও জখম হন, তাঁদের মধ্যে দু’জন নার্সিংহোমে চিকিত্‌সাধীন। রাত পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। শিলিগুড়ি পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার ভোলানাথ পান্ডে বলেন, “পুলিশের উপরে হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-সহ কয়েকটি অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের সকলকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।”

Advertisement

শিলিগুড়ি শহরে মৃতদেহ দাহ করার জন্য মাত্র একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। সে জন্য দ্বিতীয় চুল্লি তৈরির দাবি রয়েছে দীর্ঘদিন। রামঘাটে একটি বেসরকারি ট্রাস্টের আওতায় থাকা সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে কাঠের চুল্লি রয়েছে। কিন্তু ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়াই সেখানে শবদাহ হতো বলে অভিযোগ। মাসকয়েক আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বেসরকারি ট্রাস্টের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হন। কিন্তু রামঘাট ও লাগোয়া এলাকার প্রাক্তন পুরপিতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অমরনাথ ঝা, কংগ্রেসের রাজেশ যাদবরা ‘দূষণ হবে’ এই যুক্তিতে তা নিয়ে আপত্তি জানান। শিলান্যাসের দিন গোলমাল হয়। তখন মন্ত্রী মহানন্দ মণ্ডল নামে এক জনকে চড় মারেন বলে অভিযোগ। পক্ষান্তরে মন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মহানন্দবাবু, রাজেশবাবুদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি থানা মামলা দায়ের করে। দু’টি মামলাই চলছে।

এই অবস্থায় বৈদ্যুতিক চুল্লির কাজ জোরকদমে শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা শ্মশানের অদূরে মঞ্চ বেঁধে সম্প্রতি রিলে-অনশনে বসেন। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ওই অনশন মঞ্চের সামনে দিয়ে একটি শবদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় শববাহকদের উপরে বৃষ্টির মতো ঢিল পড়ে বলে অভিযোগ। খবর যায় পুলিশে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই জায়গায় অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারী লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু শিলিগুড়ি থানার আইসি বিকাশকান্তি দে সঙ্গে সাত জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে গিয়ে তাদের সরাতে চেষ্টা করেন। তাতেই বিপদে পড়ে পুলিশ। যদিও আন্দোলনকারীদের তরফে মহানন্দ মণ্ডল, রাজেশ যাদবদের দাবি, “অনশন-মঞ্চ শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করছিল। পুলিশই বরং নিরীহ মানুষের উপরে হামলা করে। পুলিশের উপরে কারা হামলা করেছে, তা জানা নেই।”

ঘটনার পরে রাজনৈতিক উত্তাপও বেড়েছে। এলাকায় গিয়ে অনশন-মঞ্চে বসেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার। তাঁরা চলে যেতে কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারও ওই মঞ্চে যান। সন্ধ্যায় সিপিএম এবং কংগ্রেস পৃথক ভাবে শহরে মিছিল করে পুলিশ ও শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে।

প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর মন্তব্য, “মন্ত্রী সাধারণ মানুষকে চড় মারছেন। পুলিশও মারছে। উন্নয়ন করতে গেলে আলোচনা করে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবুর দাবি, পুলিশ বাড়িতে ঢুকে নিরীহদের গ্রেফতার করছে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন বসুর বক্তব্য, “এলাকাবাসীকে হয়রান না করে আলোচনার মাধ্যমে কাজ এগোলেই মন্ত্রী ভাল করবেন।”

পক্ষান্তরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বক্তব্য, “কংগ্রেস-সিপিএমের নেতারা যদি শহরের উন্নয়নে এ ভাবে বাধা দেন, তা হলে শিলিগুড়ি এগোবে কী ভাবে? বিজেপি শহরের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিতে চায় না কি? যে-যেমন চেষ্টা করুক, আমরা উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। শহরবাসীও এ সব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন।”

বিজেপি অবশ্য শাসক দলের পাশে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও মুখ খুলেছে। দলের জেলা সভাপতির কথায়, “পুলিশ চূড়ান্ত অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। মন্ত্রীর সেটাও দেখা উচিত।” রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, বিক্ষোভ-পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সব দিক বিবেচনা করে পদক্ষেপ না করলে অনেক সময়ে গোলমাল বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন