দলীয় বিধায়ক ও সদস্যদের আপত্তিতে পানীয় জলের মার্ক টু নলকূপ পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমেই বসানোর সিদ্ধান্ত নিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ। শুক্রবার বালুরঘাটে জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়।
তিন মাস অন্তর একবার সাধারণ সভা করার কথা মনে করিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় অর্থ বরাদ্দের অভিযোগও উঠেছে। আরও অভিযোগ, ২০১৩ সালে তৃণমূল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ক্ষমতায় আসার পর আরআইডিএফ এবং বিআরজিএফ তহবিলের প্রায় ১২ কোটি টাকার বেশির ভাগ দলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের বিধানসভা এলাকা হরিরামপুর ও বংশীহারি ব্লকে রাস্তা, কালভার্ট সহ বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ হয়েছে। জেলার বাকি ব্লক গুলিতে ওই অসাম্য কেন, তা নিয়ে সভায় একাংশ সদস্য প্রশ্ন তোলেন।
এ দিনের সাধারন সভায় বিরোধী নেতা তথা সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ছিলেন না। তবে নলকূপ বসানোর একক সিদ্ধান্ত থেকে দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অনুগামী জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গাকে পিছু হটতে হয় বলে দলীয় সূত্রের খবর। গত ১৭ জুন সভাধিপতি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির গত ১১ মের সভার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে পিএইচই থেকে প্রাপ্ত ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলার বিভিন্ন ব্লকে মার্ক টু নলকূপ বসানোর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। জেলাপরিষদ সূত্রের খবর, ওই টাকায় প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি মার্ক টু নলকূপ কেন্দ্রীয়ভাবে জেলাপরিষদই বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিল বলে অভিযোগ।
এ দিনের সাধারণ সভায় সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, বিধায়ক সত্যেন রায়, বাচ্চু হাঁসদা, মাহমুদা বেগম থেকে জেলাপরিষদের সংখ্যা গরিষ্ঠ তৃণমূল সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জেলাপরিষদের এগজিকিউটিভ অফিসার তথা জেলাশাসক তাপস চৌধুরী-সহ সরকারি আধিকারিকেরা। সভার পরে বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘বিধায়ক এবং সদস্যদের একাংশ না জেনে ওই কথা বলেছেন। কেননা, জেলার একমাত্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিহীণ হরিরামপুর ও বংশীহারি ব্লকে বিএডিপি(সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন) প্রকল্পের কোনও টাকা পায়না। অথচ বাকি ৬টি ব্লকে বিএডিপির প্রচুর টাকা বরাদ্দ পায়। সেই কারণে ওই দুটি ব্লকে বিআরজিএফ এবং আরআইডিএফের বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়নে সমতা আনা হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলায় ৪৫টি রাস্তা তৈরির প্রকল্পের মধ্যে ২২টি রাস্তাই তৈরি হচ্ছে তপন ব্লকে। অসাম্যের অভিযোগ ঠিক নয়।’’
এ দিনের সভার শুরুতে জেলা পরিষদের সদস্য বিধায়কেরা তথ্য তুলে ধরে বলেন, বিআরজিএফ এবং আরআইডিএফের ১১ কোটি ৭৩ লক্ষ ১২ হাজার ৯৮৭ টাকার মধ্যে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দলের জেলা সভাপতির বিধানসভা এলাকায় খরচ হয়েছে। সেখানে কুশমণ্ডি ব্লকে হয়েছে মাত্র ৪০ লক্ষ টাকা, তপন ব্লকে ৮০ লক্ষ টাকা। হিলিতে ৮২ লক্ষ টাকা। আবার বালুরঘাটে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা, কুমারগঞ্জে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা প্রকল্প বাবদ খরচ হয়েছে। হাতে থাকা ১ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা বিপ্লববাবুর বিধানসভা এলাকায় খরচের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি করিগরি পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও জেলাপরিষদ কী করে গ্রামে মার্কটু নলকূপ বসাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
পরে সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা বলেন, ব্লক থেকে তালিকা চাওয়া হবে। বিধায়কেরাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন এলাকায় নলকূপ প্রয়োজন তার তালিকা দিতে পারেন। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য স্থায়ী সমিতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তারপরে পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়েই নলকূপগুলি বসানো হবে। কেননা প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতিতে পিএইচইর একজন করে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন বলে সভাধিপতি স্বীকার করেছেন। এবং তিন মাস অন্তর জেলা পরিষদে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি জানান।