তিনশো বছর আগে পুজো শুরু করেছিলেন উদয় স্টেটের জমিদার রাজনারায়ণ মজুমদার। এলাকার সব মানুষ সেই পুজোয় সামিল হতেন। উৎসবও হতো। এখন জমিদারি নেই। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গরামপুর ব্লকের পঞ্চগ্রামের পুজো রয়েছে আগের মতোই। মাঝখানে অবশ্য বন্ধ ছিল কিছু দিন। ফের চালু হয় পঁয়ত্রিশ বছর আগে।
পুজোর মণ্ডপ তৈরির জন্য এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত সৈয়দ খলিল চৌধুরী জমি দিয়েছিলেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এক সঙ্গে শুরু করে দিয়েছেন পুজোর প্রস্তুতি। প্রাক্তন বিধায়কের ভাই তথা পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সৈয়দ গফুর জানান, গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মানুষই চাঁদা দেন। আয়োজনে সামিলও হন সবাই। তিথি-নক্ষত্র মেনে বৈষ্ণব মতে পুজোর সময়সূচীও প্রত্যেককে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফুল, বেলপাতা জোগাড় করেন হিন্দুরা। মালা গাঁথা, চন্দন বাটা, ধুনুচি জ্বালানোর মতো কাজ করেন মুসলিমরা। তাঁর কথায়, “পঞ্চগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন উদাহরণ গোটা জেলায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।”
পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের বাসিন্দারাই একসময় টিন, কাপড় দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেন। এখনও মণ্ডপ সজ্জায় হাত লাগান সকলে। স্থানীয় কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে আসেন সবাই। বাসিন্দারা জানান, ঈদের সময়ে হিন্দু যুবকেরাও চাঁদা তোলেন। পুজোর সময়ে মুসলিমরাও নতুন জামা কাপড় কেনেন। পুজোর চারদিন মণ্ডপের কাছেই সময় কাটান সকলে। পুজো কমিটির সদস্য রমজান আলির কথায়, ‘‘পুজোর ক’টা দিন আমরা হইচই করে কাটাই। শহরের পুজো আর দেখতে যাওয়া হয় না।” শুধু পঞ্চগ্রাম নয়, আশপাশের শিবপুর, হন্নাহার, চালুন্দা, উদয়, জগদীশপুর, চণ্ডীপাড়া ও বাঙালিপাড়ার বসিন্দারাও হইহই করে সামিল হন এই পুজোয়।