পড়ুয়াদের কান্না, চালকের তম্বি

সাঁ সাঁ করে ছুটছিল হলুদ রঙের স্কুলবাসটি। রাস্তার বাম্পে লাফিয়ে উঠছিল বাসের চাকা। ঘুমভাঙা চোখে বারবার চমকে উঠছিল পড়ুয়ারা। হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনিতে পড়ুয়াদের কয়েকজন সিট থেকে ছিটকে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

সাঁ সাঁ করে ছুটছিল হলুদ রঙের স্কুলবাসটি। রাস্তার বাম্পে লাফিয়ে উঠছিল বাসের চাকা। ঘুমভাঙা চোখে বারবার চমকে উঠছিল পড়ুয়ারা। হঠাৎই তীব্র ঝাঁকুনিতে পড়ুয়াদের কয়েকজন সিট থেকে ছিটকে পড়ে। কারও মাথা ঠুকে যায় সামনের সিটে। কেউ আবার অন্যের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ব্যথায়, আতঙ্কে কান্না জুড়ে দেয় তারা।

Advertisement

বাসের ব্রেক কষার বিকট শব্দে চমকে উঠেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। পড়ুয়াদের কান্না শুনে ছুটে আসেন বাসিন্দাদের অনেকেই। দ্রুতগতিতে থাকা স্কুলবাসটি একটি পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা মেরে কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়। কীভাবে দুর্ঘটনা হল তা জানতে চাওয়ায় উল্টে বাসচালকই হম্বিতম্বি শুরু করেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। চালককে বাস থেকে নামতে বলায় বাস চালক সকলকে পিষে মারার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।

এর পরেই বাসিন্দাদের একাংশ জোর করে চালককে বাস থেকে নামান। বাসিন্দাদের দাবি, বাস থেকে নামার পরে চালক কোনমতেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চালকের মুখে মদের গন্ধ পেয়ে প্রশ্ন করলে, সে নিজেই মদ খাওয়ার কথা দাবি করে এবং তার জন্য কেউ কিছু করতে পারবে না বলেও হুমকি দেয়। এরপরেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা চালককে আটকে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে খবর দেন।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ শিলিগুড়ির চম্পাসারির অঞ্চল এলাকার ঘটনা। দ্রুতগতিতে থাকা স্কুলবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা মারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের দাবি, বাস চালক মদ্যপ ছিল। সে কারণেই সামনে পিকআপ ভ্যান চলে এলেও, চালক বাস থামাতে পারেনি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পিকআপ ভ্যানকে ধাক্কা মারার আগেও কয়েকবার দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে স্কুলবাসটি। মদ্যপ চালকের ওপর পড়ুয়াদের আনা-নেওয়ার ভার দেওয়া হল কেন সে প্রশ্ন তুলে বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

বাসটি শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি ছোটদের স্কুলের। বিক্ষোভ সামলাতে স্কুলের প্রধানশিক্ষক নির্ভয়কান্তি ঘোষ ঘটনাস্থলে যান। স্কুল থেকে অন্য একটি বাস আনিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে পড়ুয়াদের কয়েকজন এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, যে আর বাসে উঠতে চাইছিল না। শিক্ষকদের কয়েকজন তাদের বুঝিয়ে বাসে তুলে দেন। বেশ কয়েকজন পড়ুয়া নাগাড়ে কেঁদেই চলছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি।

স্কুলের তরফে দাবি করা হয়েছে, অসুস্থতার কারণে স্থায়ী চালক না আসায় দিনকয়েক আগে শঙ্কর শর্মা নামে অস্থায়ী চালককে নিয়োগ করা হয়েছিল। এ দিন সকালে একবার পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলে পৌঁছেও দিয়েছে সে, তারপরে দ্বিতীয় বার পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলে পৌঁছনোর সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ দিন সকাল থেকে চালক মদ্যপ অবস্থায় থাকলেও কেন কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ল না সে প্রশ্নও উঠেছে। চালককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে এ দিনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

স্কুলবাস চলাচল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না কেন তা দেখা হয় না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন স্কুলের বাস কারা চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আগে ট্রাফিক আইন ভাঙার কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশের কাছে নেই। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুলবাস চালকদের যাবতীয় তথ্য পুলিশের কাছে থাকার কথা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘মঙ্গলবারে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যথাযথ নিয়ম মেনে যাতে শহরে স্কুলবাস চলে তা দেখা হবে।’’

অভিভাবকদের অভিযোগ, অস্থায়ী ভাবে চালক নিয়োগের আগে যথাযথ ভাবে খোঁজখবর করা উচিত ছিল। যদিও, পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়ম মানার কোনও গরজ দেখায়নি বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক নির্ভয়বাবু বলেন, ‘‘দুরদুরান্তের পড়ুয়াদের কথা ভেবেই অস্থায়ীভাবে একজন বাস চালককে নিয়োগ করা হয়েছিল। একদিন বাস না চললে অনেক পড়ুয়া স্কুলে আসতে পারবে না ভেবে দ্রুত একজন অস্থায়ী চালককে নেওয়া হয়। তার সম্পর্কে বেশি খোঁজখবর করার সুযোগ হয়নি। এ দিনের ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে।’’

যদিও অভিভাবকদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, শুধুমাত্র চোখ খোলার কথা বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারবে না। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘স্কুলের নিজস্ব বাস বলে আমরা ভরসা করতে পারি। সেই স্কুলবাসের চালক যদি মদ্যপ হয়, তবে তো আমরাই শিশুদের প্রতিদিন বিপন্ন যাত্রায় তুলে দিই।’’ বিধি নিষেধ মানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন সব পক্ষের উদাসীনতার কারণেই শিশুদের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে বলে অভিভাবকদের অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন