ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির দেখা নেই। আমন চাষে তাই ভরসা তিস্তা খালের জল। মাল মহকুমার ক্রান্তির কোদালকাটি এলাকায় দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।
বৃষ্টির ঘাটতি মেটাতে জমিতে সেচের জল পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিস্তা সেচ কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ভাবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস বোরো চাষের মরসুমেই তিস্তার সেচ খালে জল ছাড়া হয়। তবে এ বছর বৃষ্টির অভাবে আমন ধান চাষও এখন মার খেতে বসেছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। সে কারণেই কৃষি দফতরের অনুরোধের জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থেকে মালবাজার পর্যন্ত তিস্তার বাঁ-হাতি মূল খালে জল ছাড়তে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এই জল আমন ধান চাষের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পৌঁছে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তিস্তা প্রকল্পের নির্বাহী বাস্তুকার প্রিয়ম গোস্বামী বলেন, “এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ এখন পর্যন্ত প্রতি বছরের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ কম। বৃষ্টির ঘাটতিতে চাষের ক্ষতি ঠেকাতেই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চার কিউমেক করে জল ছাড়া হচ্ছে। চাষিদের জল ছাড়ার তথ্য জানানোর কাজ চলছে।”
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকাতেই গত জুলাই মাসে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ৫৯ শতাংশ ছুঁয়েছে। অন্য এলাকায় ঘাটতি গড়পরতা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ধানের খেতে জল না থাকায় আমন ধানের চারা লাগানো সম্ভব হচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ। জুলাই মাসের মধ্যেই আমনের চারা পুঁতে ফেলার কথা থাকলেও, এ বার বৃষ্টির অপেক্ষায় চারা রোপণের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই কৃষি দফতর থেকে সেচের জল ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয় বলে জানা গিয়েছে। কৃষি দফতরের অনুরোধে গজলডোবার তিস্তা ব্যারাজ থেকে বাঁ হাতি ক্যানালে জল ছাড়ার কাজ শুরু করা হয়েছে বলে তিস্তা প্রকল্প সূত্রে জানানো হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানানো হয়েছে, গত মাসের শেষ থেকেই ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁ হাতি মূল খালের মোট ৪টি শাখা খালে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় ফিল্ড চ্যানালের মাধ্যমে খেতে জলও ঢুকে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ২০১১ সালে অগস্টে কয়েক দিনের জন্য জল ছাড়া হলেও, টানা জল দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন বলেই আধিকারিকদের দাবি। তবে বর্ষার সময়ে জল ছাড়া নিয়ে সেচ দফতর সর্তকও রয়েছে বলে দাবি। আচমকা ভারী বৃষ্টি হলে উল্টে বিপত্তি ঘটে যেতে পারে। সেই কারণে সেচের জন্য খালে জল ছাড়ার পরিমাণের তথ্য নিয়মিত দফতরের আধিকারিকদের এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে।
এই অবস্থায় ক্রান্তি আর লাটাগুড়ি এলাকার কৃষকদের মধ্যে খালে জল ছাড়ার ঘটনায় উৎসাহ ছড়িয়েছে। রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধলাবাড়ি এলাকার চাষি সাজাহান আলি বলেন, “সেচের জল খেতে দাঁড়ালেই আল বেঁধে দ্রুত আমন ধানের চারা লাগানোর কাজ শুরু করব।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম বলেন, “বৃষ্টির অভাব মেটাবে সেচের জল।”