পড়ুয়াদের স্কুলে এনে ফিরে গেলেন শিক্ষক

স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়ে এনে পরের দিনই স্কুল ছাড়লেন শিক্ষক। সোমবার মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের বাংলার শিক্ষক ইস্রায়েল শেখ রওনা দিলেন কৃষ্ণনগর নেতাজী বিদ্যাপীঠে যোগ দিতে। গত রবিবার মালবাজারের স্কুলে স্কুলছুট আর অনাথ শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অভাবের তাড়নায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হওয়া শিব ওঁরাও, রবিন মুণ্ডাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৭
Share:

পড়ুয়াদের জন্য ছিল ম্যাজিক- শোও। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।

স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়ে এনে পরের দিনই স্কুল ছাড়লেন শিক্ষক। সোমবার মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের বাংলার শিক্ষক ইস্রায়েল শেখ রওনা দিলেন কৃষ্ণনগর নেতাজী বিদ্যাপীঠে যোগ দিতে। গত রবিবার মালবাজারের স্কুলে স্কুলছুট আর অনাথ শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অভাবের তাড়নায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হওয়া শিব ওঁরাও, রবিন মুণ্ডাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনেন তিনি। মঞ্চে উঠে সকলকে ওরা জানায়, “ফের স্কুলে আসব।” সবটাই এই বাংলার শিক্ষকের উদ্যোগে।

Advertisement

২০০১ সালে মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর মালবাজার শহরে তাঁরই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তৈরি করেন ধ্রুবতারা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুঃস্থ পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দেওয়া, আর্থিক সাহায্য বা উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা করা, সবই হতো ওই সংগঠনের মাধ্যমে। গত ১৩ বছর ধরে মালবাজারেই রয়েছেন তিনি। বাড়ি কৃষ্ণনগরে। সম্প্রতি বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ির অদূরে কোনও স্কুলে বদলির জন্য আবেদন করেন। আর সেই বদলির সম্মতি মেলার পরেই যাওয়ার আগের দিনটিকে যাতে মালবাজারের বাসিন্দাদের কাছে স্মরণীয় করে রাখা যায়, সেই চেষ্টাতেই লেগে পড়েন তিনি। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন স্কুলের স্কুলছুটদের তালিকা তৈরি করেন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলছুটদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানোর জন্য তৈরি করেন। নিজেও স্কুলছুটদের বাড়ি বাড়ি যান তিনি।

ইস্রায়েল শেখের সেই পরিশ্রম সফল করেই সাত স্কুলছুট ফিরেও আসে। রবিবারের মঞ্চে ছোটদের আনন্দ দিতে ছিল ম্যাজিক দেখানো থেকে পুতুল নাচের আয়োজন। স্কুলছুট হয়ে যাওয়া মালবাজারের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অজয় রায়ের কথায়, “সপ্তম শ্রেণির পর স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাবা অসুস্থ। একটা চায়ের দোকান রয়েছে। মায়ের সঙ্গে দোকানই করব ভেবেছিলাম। কিন্তু ইস্রায়েল স্যার আমাকে বোঝালেন, অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে আমি একটা চাকরি পেতে পারি। তাই আবার স্কুলে ফিরে এসেছি।”

Advertisement

এ দিন ওই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মালবাজার লাগোয়া শালবাড়ি মোড়ের একটি অনাথ আশ্রমের আবাসিক পড়ুয়াদের কম্বলও বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক)পরিদর্শক স্বপন সামন্ত। তিনি বলেন, “ইস্রায়েলবাবুর মত শিক্ষক সব এলাকাতেই প্রয়োজন। তাহলে স্কুলছুট বলে আর কেউ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।”

কিন্তু ইস্রায়েল শেখ যে আর মালবাজারের ওই স্কুলে পড়াবেন না, তা যেন শেষমুহূর্তেও মানতে পারছিলেন না তাঁর সহকর্মী-সহ মালবাজারের অনেক বাসিন্দাই। সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটায় মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের গেট খুলে যখন ইস্রায়েল শেখ বেরোচ্ছেন, প্রধান শিক্ষক সুশান্ত দত্তের তখন চোখে জল। তাঁর কথায়, “ইস্রায়েল চলে যাচ্ছেন, সেটা ভাবতেও পারছি না। ওর মত শিক্ষক সব স্কুলেরই গর্ব।” ছাত্র ছাত্রীরাও প্রিয় স্যারকে বিদায় জানাতে স্কুল গেটে ভিড় জমায়। শুভায়ুন হাজরা, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের মতো পড়ুয়াদের কথায়, “আমরা স্যারকে কোনওদিন ভুলতে পারব না।” আর ইস্রায়েল শেখ তখন বললেন, “মালবাজারের জন্যে কাজ করতে আমি অনেক ছাত্রছাত্রীকে রেখে গেলাম। ওরাই এখন এলাকার উন্নয়নের কাজ শুরু করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন