ফের দুর্ঘটনা টয় ট্রেনে

গতি বেড়ে যাওয়া টয়ট্রেন থেকে আতঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে সোমবার, ২৬ তারিখই মারা গিয়েছিলেন এক পর্যটক। বুধবার ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত টয়ট্রেন। একবার নয়, দু’বার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

গতি বেড়ে যাওয়া টয়ট্রেন থেকে আতঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে সোমবার, ২৬ তারিখই মারা গিয়েছিলেন এক পর্যটক। বুধবার ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত টয়ট্রেন। একবার নয়, দু’বার।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার এবং বুধবার সকালে দুই দফায় কার্শিয়াঙের টুং-এলাকার টয়ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে হতাহতের কোনও ঘটনা না ঘটলেও টয়ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামো নিয়ো প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। গত সোমবার ঘটনাটি ঘটেছিল পাহাড়ি রেলপথের চুনাভাটিতে।

দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের অধীনে থাকা টয়ট্রেন পরিষেবা উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল (এনএফআর) কর্তৃপক্ষই দেখাশুনো করেন। এনএফআরে’র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুগত লাহিড়ী বলেন, “দু’দিন পরপর টুং এলাকায় টয়ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। আমরা এক কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” তিনি জানান, যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে টয়ট্রেন এমনিতেই আস্তে চলে। কোনও কোনও সময় ঢালু বা বাঁকে সামান্য গতিবেগ বাড়ে। আমরা অবশ্য এই ধরণের ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখে আগামীতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেব।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, ধস এবং ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ থাকায় শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং স্বাভাবিক টয়ট্রেন পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শিলিগুড়ি জংশন থেকে গয়াবাড়ি জঙ্গল সাফারি, দার্জিলিং থেকে ঘুম জয়রাইড ছাড়াও কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং অবধি একটি প্যাসেঞ্জার টয়ট্রেন চালানো হয়। লাইনচ্যুত হওয়ার দুটি ঘটনাই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিতে ঘটেছে। প্রথম দিন সকাল ৭টা এবং দ্বিতীয় দিন সাড়ে ৭ টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। প্রথমদিন ট্রেনে সাতজন যাত্রী থাকলেও পরেরদিন ট্রেনে কোনও যাত্রী ছিলেন না।

রেলের কয়েকজন অফিসার জানান, ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যেই তা হয়। তবে ট্রেন কোনও সময় উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। গত দু’দিনই ট্রেনের কামরাগুলি লাইনেই ছিল। তবে ইঞ্জিনটি লাইনচ্যুত হয়। পিছনের তিনটি কামরা লাইনেই ছিল। এর পরে ট্রেনের চালক, কর্মীরা প্রায় ১৫ মিনিটের চেষ্টায় ইঞ্জিনকে লাইনে তুলতে সক্ষম হন। তার পরে দুই ক্ষেত্রেই ট্রেন এর পরে দার্জিলিঙে, গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে টয়ট্রেনের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে সাত সকালে স্কুল, কলেজের ছেলেমেয়েরা ট্রেনটিকে ব্যবহার করে। তবে স্কুল কলেজে শীতের ছুটি থাকায় তাই অধিকাংশ দিনই ট্রেনটি ফাঁকা যাতায়াত করে। অনেক সময়ই পযর্টকেরাও ট্রেনটি উঠে পাহাড়ি সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন।

সোমবার চুনাভাটির একটি বাঁকে নীচে নামার সময়ে টয়ট্রেনের গতি অত্যন্ত বেড়ে যায় বলে ওই ট্রেনের যাত্রীরা জানিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, হঠাৎ করে ট্রেনটি জোরে চলে থাকে। তিনটি কামরাগুলি দোলা শুরু করে। লাইনে চাকার প্রচন্ড ঘর্ষণেপ আওয়াজও হয়। সেই সময় ট্রেনের গার্ড ব্রেকফেল হয়ে বলে চিৎকার করে নীচে নেমে আসেন বলে অভিযোগ। এতে আতঙ্কিত হয়ে বেলেঘাটার বাসিন্দা ওই মহিলা ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেও তিনি মারা যান। আরও তিন জন ঝাঁপ দিয়ে কমবেশি আহত হন। ঢালু বাঁকে ট্রেনের এয়ারব্রেক দেরিতে ধরায় ওই বিপত্তি দেখা দেয়। টয়ট্রেনের রক্ষনাবেক্ষণ নিয়েও নানা কথা বলেন রেলের একাংশ কর্মী। এরই মধ্যে ফের দুই দফায় লাইনচ্যুত হওয়ায় টয়ট্রেনকে ঘিরে ফের প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন