‘যুদ্ধবিরতি’ শেষ মালদহে।
হাজার হোক, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ‘এক সঙ্গে মিলেমিশে’ কাজ করার নির্দেশ ছিল যে! কিন্তু সেই নির্দেশ আর বাস্তবে যে ফারাক থেকে গিয়েছে বোঝাতে সময় নিলেন না মালদহে তৃণমূলের দুই মন্ত্রী। শনিবার, লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরদিনই একে অন্যের দিকে ফের তোপ দাগতে শুরু করলেন সাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। দুই শিবিরই বোঝাতে ব্যস্ত, অন্য শিবিরের অন্তর্ঘাতের জন্যই জেলায় দলের কোনও প্রার্থীই জেতেননি।
দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির দায় স্বীকার করে রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী দেবী তৃণমূলের মালদহ জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। পক্ষান্তরে, পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু ‘অন্তর্ঘাতে’ কে বা কারা যুক্ত তা চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার জন্য দলীয় পর্যায়ে তদন্তের দাবি করেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের রাজ্য নেতৃত্ব সাবিত্রীর ইস্তফা গ্রহণ করেননি। তাঁকে কলকাতায় এসে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, মালদহে যা চলছে, তাতে দলের উপর মহল খুশি নয়।
শনিবার মালদহের সদরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন সাবিত্রী। তাঁর প্রতিপাদ্যদলের মধ্যে কোন্দল ছিল। উপরন্তু, অন্তর্ঘাত হয়েছে। তাই মালদহের দু’টি আসনেই হেরেছে তৃণমূল। নেত্রীর অভিযোগ, কৃষ্ণেন্দুর অনুগামীরা দক্ষিণ মালদহে দলের প্রার্থীর বদলে বিজেপি-র হয়ে ভোট করেছে। সাবিত্রীর কথায়, “ইংরেজবাজার আসনে কৃষ্ণেন্দু এক বছর আগে (উপ-নির্বাচন) ২১ হাজারের বেশি ভোটে জিতল। তেমন কিছু (অন্তর্ঘাত) না হলে ওই আসনে আমাদের প্রার্থীর চেয়ে বিজেপি কী করে ৩৭ হাজারেরও বেশি লিড পেল?” সাবিত্রী-বিরোধী শিবির মোদী-হাওয়ার প্রসঙ্গ তুলছে। ইংরেজবাজার পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টিতে বিজেপি এগিয়ে যাওয়ার নৈতিক দায় নিচ্ছেন কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু সে সব নস্যাৎ করে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী জানাচ্ছেন, জেলায় যারা অন্তর্ঘাত করেছে, তাদের তালিকা তিনি করছেন। জলদি রাজ্য নেতৃত্বের হাতে সেই তালিকা তুলে দেবেন।
“অন্তর্ঘাত হয়েছে”, বলেছেন কৃষ্ণেন্দুও। তবে তাঁর সংযোজন, “জেলা সভানেত্রীর বিরুদ্ধেও রাজ্য নেতৃত্ব তদন্ত করুক।” বিজেপি-র হয়ে ভোট করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তাঁর দাবি, রতুয়া, মালতিপুর, চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরে (সংগঠনগত ভাবে সাবিত্রী এই এলাকাগুলোর দায়িত্বে) তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ অন্তর্ঘাত করেছেন।
জেলায় তৃণমূলের তৃতীয় শিবিরের নেতা বলে পরিচিত ইংরেজবাজারের উপ-পুরপ্রধান দুলাল (বাবলা) সরকার অবশ্য ভোটে দলের খারাপ ফলের জন্য দুই মন্ত্রীকেই দুষেছেন। তাঁর দাবি, জেলায় যাঁরা ‘প্রকৃত’ তৃণমূল কর্মী তাঁদের কাজে নামতে পারেননি দুই মন্ত্রী।
দলের তিন নেতা-নেত্রীর এই চাপান-উতোরে অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের আক্ষেপ, এই তিন জন এক সঙ্গে না হওয়াতেই ফাটল ধরানো যায়নি কোতোয়ালির (গনি পরিবারের বাসভবন) দেওয়ালে। অথচ, আগে থেকে বিপদ আঁচ করে এই তিন জনকেই সতর্ক করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মার্চ মাসে মালদহ বিমানবন্দরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সামনে মমতাকে কাটাকাটা ভাবে বলতে শোনা গিয়েছিল, “সাবিত্রী, কৃষ্ণেন্দু, বাবলাতোরা সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবি কিন্তু।”
সে কথা মনে করিয়ে জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার টিপ্পনী, “দিদির হেলিকপ্টারটা চোখের আড়াল হতে যেটুকু দেরি! ওঁরা কিন্তু যে যার পথেই চললেন।”