মদনমোহন মন্দিরে চলছে রাসচক্র তৈরির কাজ।
রাসমেলার বাকি আর দু’দিন। এখনও ফাঁকা পড়ে আছে মাঠ। বিচ্ছিন্ন ভাবে রাস্তার দু’ধারে দু-একটা দোকানের কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হলেও মাঠের ভিতরে কোনও কাজ শুরু হয়নি এখনও। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা মনে করছেন, হ্যামিল্টন গঞ্জ, ধূপগুড়ি, বারবিশায় কালী পুজো উপলক্ষ্যে মেলা চলছে। সেই মেলা সেরে দোকানিরা তাঁদের পসরা নিয়ে হাজির হবেন রাসমেলায়। পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাসমেলায় দোকান করার জন্য আড়াই হাজারের উপর আবেদন পত্র জমা পড়েছিল। জায়গার অভাবে প্রায় দু’শো জনকে অনুমতি দেওয়া যায়নি। এখনও দোকানিরা না আসায় আমরা একটু চিন্তিত। বিভিন্ন জায়গায় কালী পুজোর মেলা চলছে। সে কারণেই দোকানিরা আসতে পারছেন না।” মেলা পরিচালনার মূল দায়িত্ব কোচবিহার পুরসভার। পুর চেয়্যারম্যান দীপক ভট্টার্চায বলেন, “সবাই অনুমতি নিয়েছে। টাকাও জমা দিয়েছে। কিন্তু এখনও কেউ আসছেন না।পরে মেলার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করবেন তাঁরা। এবার ওই আবদার মানা হবে না। কোচবিহারের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “আশা করছি দু’দিনের মধ্যে দোকানিদের অনেকে চলে আসবেন।”
পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী ৬ নভেম্বর রাসমেলা শুরু হবে। সাধারণত পনেরো দিন ধরে মেলা চলে। প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের আর্জি মেনে শেষের দিকে মেলার দিন বাড়ানো হয়। এবার সব দিক ভেবে ১৮ দিন মেলা চালানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। এর পরে আর মেলার মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানান, মেলার মাঠ তো বটেই, লাগোয়া সমস্ত রাস্তায় দোকানিরা বসেন পসরা সাজিয়ে। পঞ্চরঙ্গী মোড় থেকে শুরু করে রাসমেলা মাঠের সামনে দিয়ে মদনমোহন বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুই ধার দিয়ে দোকান বসে।
এখনও ফাঁকা মাঠের বেশির ভাগ জায়গা।
এবিএন শীল কলেজের সামনে ও জেনকিন্স স্কুলের পাশ দিয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারেও দোকান বসে। রাসমেলার মাঠ জুড়েও থাকে রকমারি জিনিসের দোকান। যেগুলি ঘিরে বাসিন্দাদের উত্সাহ থাকে প্রবল। ভূটান ও পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকেও শীতের পোশাক নিয়েও রাসমেলায় হাজির হন দোকানিরা। কাশ্মীর থেকেও আসেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অপেক্ষাতেই এখন দিন গুনছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা। কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, “স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই মেলায় স্টল তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বাইরে থেকে যারা আসেন এখন তাঁদের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। হ্যামিল্টন গঞ্জের মেলা শেষ হলেই ওই ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে হাজির হবেন।”
রাসমেলার মাঠ ফাঁকা থাকলেও মদনমোহন বাড়ি অবশ্য সেজে উঠেছে ইতিমধ্যেই। মন্দির রং করার কাজ প্রায় শেষ। রাসচক্র তৈরির কাজও অনেকটাই এগিয়েছে। অস্থায়ী ভাবে মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। সেখানে নানা ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন,“ রাস পূর্ণিমার আমাদের সব কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।”
ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।