বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কার্যত বন্ধ দলমোড় বাগান

ডুয়ার্সের দলমোড় বাগানের সহকারী ম্যানেজারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুনের জেরে কার্যত বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন মালিকপক্ষের সব প্রতিনিধি। শুক্রবার সকালে বাগানে কোনও কাজ হয়নি। বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়নি। ফলে, বাগানের ১২০০ শ্রমিক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কবে বাগান খুলবে তা জানতে কোথায় যাবেন তাঁরা সেটাও ভেবে পাচ্ছেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বীরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩৫
Share:

চা বাগানে পুলিশি টহল।

ডুয়ার্সের দলমোড় বাগানের সহকারী ম্যানেজারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুনের জেরে কার্যত বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন মালিকপক্ষের সব প্রতিনিধি। শুক্রবার সকালে বাগানে কোনও কাজ হয়নি। বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়নি। ফলে, বাগানের ১২০০ শ্রমিক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কবে বাগান খুলবে তা জানতে কোথায় যাবেন তাঁরা সেটাও ভেবে পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে চা মালিকদের সব সংগঠন বিন্নাগুড়ির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স ক্লাবে বৈঠক করে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি তোলে। ওই ঘটনা নিয়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ দিন একটি বিবৃতিতে ঘটনার কঠোর নিন্দা করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে দেশের চা বাগান মালিকদের শীর্ষ সংগঠন কনসালটিভ কমিটি অফ প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশন (সিসিপিএ)। প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় ওই বাগানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

Advertisement

সুনসান চা বাগান ফ্যাক্টরি চত্বর।

ওই বাগান শ্রমিক অসন্তোষের জেরে টানা ১০ মাস বন্ধ ছিল। গত বছর মে মাসে বাগানটি চালু হয়। গত ১০ মাস ধরে বাগানে তেমন শ্রমিক অসন্তোষ ছিল না। উল্টে রুগ্ণ ওই চা বাগানকে চাঙ্গা করতে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি কাজ করছিলেন বলে তাঁদের দাবি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এক মহিলা শ্রমিকের সঙ্গে কাজ নিয়ে বচসা বাধে সহকারী ম্যানেজার অজিত পানোয়ারের। ওই সহকারী ম্যানেজার দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। মহিলার স্বামী শোভেন রানা বাগানের সহকারী ম্যানেজার অজিতবাবুকে বাগানের মধ্যে কুপিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় শোভেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

এই অবস্থায় ধৃত শোভেনের স্ত্রী সাবিত্রীদেবী বৃহস্পতিবার রাতেই বীরপাড়া থানায় পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ওই সহকারী ম্যানেজার শ্লীলতাহানি করেছিলেন। তবে অজিতবাবুর খুনের ঘটনায় সাবিত্রীদেবীকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশ। এমতাবস্থায়, এ দিন শ্রমিত বস্তির বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে সাবিত্রীদেবী-সহ তাঁর পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন।

বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শোভেন রানা কয়েক বছর ধরে শ্রমিক সর্দারের কাজ করতেন। ন’মাস আগে তাকে কর্তৃপক্ষ সর্দারের জায়গা থেকে সরিয়ে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন। তা কিছুতেই তিনি মেনে নিতে পারেননি বলে শোভেনবাবুর প্রতিবেশীরা কয়েকজন জানান। শ্রমিকদের উপর নজরদারির বদলে তিনি শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পারবেন না বলে কাজ থেকে ছুটি নেন। তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীদেবী অবশ্য পাতা তোলার কাজ করে যাচ্ছিলেন। পুরানো রাগও খুনের আরেকটি কারণ হতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ।

বাগানের আরএসপি-এর চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দশরাম টোপ্পো বলেন, “এ ধরণের ঘটনা মানা যায় না। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তো আমাদের সম্পর্ক খারাপ নয়। তবে তারা যেখানে যাকে কাজে যেতে বলবেন, তা শ্রমিকদের মানতে হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মানলে তো বাগান চলবে না। বৃহস্পতিবার যা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক। তাড়াতাড়ি বাগান খুলুক।” বাগানের তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জ্যোতি লামার কথায়, “আমাদের বাগানে শান্তি ছিল। এখন বাগান খুললে যাতে কোনও অশান্তি না হয় সেটা সকলকেই দেখতে হবে।”

শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন