বিজেপি অফিস ভাঙল তৃণমূল

কংগ্রেসের ‘ঘর’ ভাঙল বিজেপি। তবে, ‘দলবদল’ কেন--প্রশ্ন তুলে ‘শাস্তি’ দিতে এগিয়ে এল তৃণমূল। শাসক দলের এমনই খবরদারির সাক্ষী থাকল শিলিগুড়ি। শুক্রবার, শিলিগুড়ির প্রধাননগর এলাকায় এক কংগ্রেস কর্মী দলবদল করে বিজেপি-তে যোগ দেন। সেই সূত্রেই রাতারাতি কংগ্রেসের স্থানীয় কার্যালয়টিতে বিজেপি-র দখলদারি কায়েম হয়। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে শনিবার পুলিশের সামনেই পে-লোডার নিয়ে এসে বিজেপি-র নব্য ওই কার্যালয়ের পাঁচিল ভেঙে দিল তৃণমূল কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৫
Share:

শিলিগুড়ির প্রধাননগরে ভাঙচুর হওয়া বিজেপি কার্যালয়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

কংগ্রেসের ‘ঘর’ ভাঙল বিজেপি। তবে, ‘দলবদল’ কেন--প্রশ্ন তুলে ‘শাস্তি’ দিতে এগিয়ে এল তৃণমূল। শাসক দলের এমনই খবরদারির সাক্ষী থাকল শিলিগুড়ি।

Advertisement

শুক্রবার, শিলিগুড়ির প্রধাননগর এলাকায় এক কংগ্রেস কর্মী দলবদল করে বিজেপি-তে যোগ দেন। সেই সূত্রেই রাতারাতি কংগ্রেসের স্থানীয় কার্যালয়টিতে বিজেপি-র দখলদারি কায়েম হয়। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে শনিবার পুলিশের সামনেই পে-লোডার নিয়ে এসে বিজেপি-র নব্য ওই কার্যালয়ের পাঁচিল ভেঙে দিল তৃণমূল কর্মীরা।

অভিযোগ, শিলিগুড়ি থানার অদূরে ওই পার্টি অফিস ভাঙচুরের সময়ে থানার আইসি-সহ পুলিশকর্মীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি তাঁরা। জেলা বিজেপি-র এক নেতা বলেন, “পুলিশের সামনে পিস্তল, পাইপগান উঁচিয়ে তৃণমূলের কয়েক জন হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘দলবদল চলবে না। বিজেপি-র পার্টি অফিসও খোলা যাবে না।” তবে, আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তৃণমূল কর্মীদের তাণ্ডব সত্ত্বেও পুলিশ ছিল ‘নির্বিকার’। বিজেপি-র অভিযোগ, উল্টে তাদের দলীয় কর্মীদের ‘সরে পড়ার’ পরামর্শ দেয় পুলিশ। জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ শনিবার রাতে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় সে শাসক দলের কর্মী হিসেবেই পরিচিত। শিলিগুড়ি কমিশনার জগ মোহন অবশ্য বলেন, “যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। তবে, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহেই সে গ্রেফতার হয়েছে।” ওই ঘটনায় তাদের অন্তত তিন জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিজেপি-র দাবি।

Advertisement

এ দিনই ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়িতে অবশ্য বিজেপি-র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, দলীয় সভা সেরে ফেরার পথে বিজেপি-র এক দল সমর্থক তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ জুড়ে ‘অশান্তির পরিবেশ’ তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। ওই ঘটনায় বিজেপি-র জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিকের অবশ্য দাবি, সাপ্টিবাড়িতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন দেখে ‘ভয়’ পেয়ে হামলা চালায় শাসক দলই।

শুক্রবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে এক সভায় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে প্রধাননগর এলাকার কংগ্রেসের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি শ্যামসুন্দর সিংহ তাঁর কয়েক জন অনুগামীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। দলবদলের ঘোষণার সঙ্গেই শ্যামসুন্দর জানিয়ে দিয়েছিলেন, কংগ্রেসের স্থানীয় পার্টি অফিসটিও এখন থেকে বিজেপি-র দলীয় কার্যালয় হিসেবেই ব্যবহার করা হবে। কারণ, কংগ্রেসের ওই কার্যালয়টি রয়েছে তাঁর নামেই। সেই মতো প্রধাননগরের ‘নব্য’ বিজেপি কার্যালয়ের উদ্বোধনও হয় ওই দিনই।

কংগ্রেসের ‘ঘর’ ভেঙে শ্যামসুন্দরের বিজেপি-তে যোগ দেওয়া এবং রাতারাতি কংগ্রেসের কার্যালয় বিজেপি-র দখলদারি কায়েম হওয়াতেই আপত্তি তোলে শাসক দল। বিজেপি-র অভিযোগ, ‘শাস্তি স্বরূপ’ শনিবার তাই কার্যালয়ের পাঁচিল ভেঙে দেয় তৃণমূল। ভাঙচুর চালান হয় অফিসের ভিতরেও।

শ্যামসুন্দরের দলবদল এবং দলীয় কার্যালয় বিজেপি-র হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে এ দিন সকালে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখান। তবে মিনিট কয়েকের মধ্যেই তারা রণে ভঙ্গ দিলে এরপর সেখানে রীতিমতো পে-লোডার নিয়ে এসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ পাল অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই বাড়ি ভাঙচুর আমাদের কাজ নয়। যাকে ধরা হয়েছে সে-ও দলের কেউ নয়। স্থানীয় বাসিন্দারাই বিজেপি-র দখলদারির প্রতিবাদ করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন