ভুয়ো কাজ দেখিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে ২৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় তদন্তে নেমেছে মালদহ জেলা প্রশাসন। মালদহের রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দটোলা এলাকার ঘটনা। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন পর্ষদ তহবিলের (বিইইউপি) বরাদ্দ ওই টাকায় কাজ না করেই রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় তা আত্মসাত্ করেছেন বলে তৃণমূলের পাশাপাশি বাসিন্দাদের একাংশও অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগ, এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় দু’বছর আগে একটি রাস্তা তৈরি হয়েছে। পরে সেই রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ দেখিয়ে বিধায়ক অর্থ আত্মসাত্ করেছেন বলে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার ওই অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, “প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তের পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলহার নদীর ওপারে মহানন্দটোলা এলাকার লালুটোলা থেকে নেগুটোলা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা দু’বছর আগে পাকা করার কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই রাস্তার কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরে ওই রাস্তার উপর ছ’টি পৃথক জায়গায় মাটি ভরাট করার কাজ দেখিয়ে সমরবাবু নিজের বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন বলে অভিযোগ। পরিচিত এক ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে কাজ না করেই বিধায়ক এর মধ্যেই ১৪ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি প্রকল্পে ৫ লক্ষ ও একটি প্রকল্পে ৩ লক্ষ টাকার মাটি ভরাটের জন্য মোট ২৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেগুলির মধ্যে রয়েছে, বীরেন মন্ডলের বাড়ি থেকে সম্বলপুর কালভার্ট, মহাপতি মন্ডলের বাড়ি থেকে কোতোয়ালি বীরেন মন্ডলের বাড়ি, প্রভাস মন্ডলের বাড়ি থেকে মহাপতি মন্ডলের বাড়ি, উদয়পুর প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রভাস মন্ডলের বাড়ি ও নাকাট্টি কালাচাঁদের বাড়ি থেকে উদয়পুর প্রাথমিক স্কুল। এই পাঁচটি প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা। আর সম্বলপুর কালভার্ট থেকে বাজিতপুর পর্যন্ত প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের সব কটিই রয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি পাকা রাস্তার উপর।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়ক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা তৈরি হওয়ার দু’বছর আগে আমি নিজের টাকা খরচ করে মাটি ভরার কাজ করেছিলাম। পরে ওই প্রকল্পগুলির জন্য বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দেখাই। ফলে এতে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসছে কোথা থেকে?”কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তা তৈরির আগে রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ তো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা করে থাকে। এ প্রসঙ্গে বিধায়কের দাবি, “পাকা হওয়ার আগে মাটির ওই রাস্তায় যেখানে প্রচুর নিচু জায়গা ও ডোবা ছিল, সেখানেই মাটি ভরে তা উঁচু করাই। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় সেখানে নিচু করেই রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হত।”
বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের রতুয়া-১ ব্লকের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ফজলুল হক, সহ সভাপতি দশরথ যাদবরাও। দু’জনেই বলেন, “ওই রাস্তা দু’বছর আগে পাকা হয়েছে। কোথায় কীভাবে রাস্তা হবে, কতটা মাটি ভরতে হবে, সব দেখেই তো প্রকল্পের খরচ তৈরি করা হয়। ফলে সব জেনে টাকা আত্মসাত্ করতেই বিধায়ক অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে জনস্বার্থে মামলা করা হবে।”