বুনোরা শহরে ঢুকে পড়লে সংযত থাকুন

একটা সময় তো শিলিগুড়ি শহরের গা ছুঁয়ে ছিল ঘন জঙ্গল। এখন তা অনেক দূরে সরেছে। তা বলে জঙ্গল উবে গিয়েছে, তা তো নয়। বৈকুণ্ঠপুর, মহানন্দার বনাঞ্চলে এখনও অনেক বন্যপ্রাণীর আহার ও বাসস্থান জোগায়। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাসের পাশেই বৈকুণ্ঠপুরের সংরক্ষিত জঙ্গল।

Advertisement

অনিমেষ বসু

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

একটা সময় তো শিলিগুড়ি শহরের গা ছুঁয়ে ছিল ঘন জঙ্গল। এখন তা অনেক দূরে সরেছে। তা বলে জঙ্গল উবে গিয়েছে, তা তো নয়। বৈকুণ্ঠপুর, মহানন্দার বনাঞ্চলে এখনও অনেক বন্যপ্রাণীর আহার ও বাসস্থান জোগায়। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাসের পাশেই বৈকুণ্ঠপুরের সংরক্ষিত জঙ্গল। মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে বৈকুণ্ঠপুরে হাতি, চিতাবাঘের যাতায়াত রয়েছে।

Advertisement

সেই রাস্তায় অনেক সময়ে প্রান্তিক লোকালয়ে হাতি-চিতাবাঘের আনাগোনা লেগেই থাকে। চা বাগান কিংবা বনবস্তি এলাকায় হাতি, চিতাবাঘ ঢুকে পড়লে সেখানকার বাসিন্দারা কিন্তু তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন না। বরং তিন দিক বা দু’দিক থেকে নানা কায়দায় তাড়িয়ে জঙ্গলের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। তাতেই কাজ হয়। বুনো জন্তুরা আস্তানায় ফিরে যেতে পারে। শিলিগুড়িতে বুধবার যা হল, তা ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হয়। কারণ, বেচারা হাতিটিকে যেন চক্রব্যূহে ফেলা হয়েছিল। মারাও যেতে পারত। এমনকী, ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক প্রাণহানি ঘটাতে পারত। কিন্তু, হাতিটি সে সব কিছু করেনি। তাই আমার শিলিগুড়ির মানুষের কাছে অনুরোধ, আগামী দিনে হাতি-চিতাবাঘ কিংবা বুনো জন্তু লোকালয়ে ঢুকলে তাকে চার দিক থেকে যাতে না ঘিরে ফেলা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বন দফতরের পরামর্শ মেনে সকলকে সংযত থাকতে হবে।

হাতিটি ঢুকে পড়ার খবরটা ভোরেই পেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে তাড়িয়ে যাতে একতিয়াশাল থেকে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলের কাছে নিয়ে য়াওয়া যায় সেই চেষ্টা শুরু হয়। বন দফতর সেই মতো কাজে নামে। আজব ব্যাপার হল, বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে ঢোকার মুখে হাতির সামনে গোটা দশেক মোটরবাইক এবং কয়েকশো মানুষ গিয়ে তারস্বরে চিৎকার শুরু করে।

Advertisement

কেউ তারই মধ্যে মোবাইল বার করে ছবি তুলতে থাকে। চেঁচামেচি হাতিটি ঘাবড়ে গিয়ে ফের শহরমুখী হয়ে যায়। কিন্তু, শহরের মানুষেরাও বসে নেই। তাঁরাও রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। ফলে হাতি যত এগোয়, ততই ভিড় বাড়ে। সেবক রোডে হাতিটি যখন পৌঁছয়, তখন কাতরে-কাতারে মানুষের ভিড়। ঢিল পড়ছে ইতিউতি। হাতিটি বাইক সরিয়ে, গাড়ি পেরিয়ে এগোতে গিয়ে জখম হল। দেওয়াল ভাঙতে গিয়ে আঘাত পেল। শেষ অবধি ঘুমপাড়ানিগুলিতে কাহিল হলে তাকে সরানো গেল। তখনও দেখলাম, নিজস্বী তোলার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন অনেকে।

আচ্ছা, মানুষ যখন জঙ্গলে ঢোকে তখন বুনো জন্তুরা চার দিক থেকে এভাবে ঘিরে ধরে?

এটা মাথায় রাখতে হবে সকলকেই। দোহাই, বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকলে তাকে নিরাপদে বনে যাওয়ার রাস্তা করে দিন। সেলফি তুলতে হলে চিড়িয়াখানায় যান। বন বিভাগের পিলখানায় কুনকি হাতি রয়েছে। সেখানে গিয়ে মাহুতের তত্ত্বাবধানে যত খুশি নিজস্বী তুলুন।

(প্রতিবেদক হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) কো-অর্ডিনেটর)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন