বিবৃতি নয়, প্লাস্টিক রোধে প্রয়োজন নির্দেশ

খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব আশ্বাস দিলেও শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা তা হলে বাড়ছে কেন, সেই প্রশ্নে পুরসভার অফিসার-কর্মীদের অনেকেই একান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
Share:

প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে অবাধেই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব আশ্বাস দিলেও শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা তা হলে বাড়ছে কেন, সেই প্রশ্নে পুরসভার অফিসার-কর্মীদের অনেকেই একান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

তাঁদের কয়েকজনের বক্তব্য, নেতা-মন্ত্রী-আমলারা যদি শক্ত হাতে হাল ধরতে না চান তা হলে শহরে কোনও বিধি বলবত্‌ করা বাস্তবে কষ্টসাধ্য। শিলিগুড়ির পুরসভার একাধিক অফিসার-কর্মী একান্তে জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে শহরের কোনও দোকান একটাও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের সাহস দেখাবে না। এক পুর অফিসারের কথায়, “শুধু মুখে বিবৃতি দিলে হবে না। কাগজে-কলমে নির্দেশ দিলেই কাজের কাজ হয়ে যাবে। আমরা অতীতে শহরকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত করেছি। এখন পারব না কেন?”

বস্তুত, বছর পাঁচেক আগেও শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে যে ভাবে আসরে নেমেছিল পুরসভা-প্রশাসন তা ‘দৃষ্টান্তমূলক’ বলে মত দিয়েছিলেন পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই। দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেও অভিনন্দনের বার্তা পৌঁছেছিল শিলিগুড়ি শহরে। সেই শহরে এখন নেতা-কর্তা-আমলাদের একাংশের তরফে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই বলেই পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে বলে শহরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ।

Advertisement

শিলিগুড়ি পুরসভার সাফাই বিভাগের আওতায় একঝাঁক চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ হয়েছিল। সেই সময়ে তৃণমূলের হাতে ছিল ওই বিভাগটি। সেই চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের কয়েকজনের অভিযোগ, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী অভিযান চালানোর কাজে পুরসভার অন্দর থেকেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতাদের একাংশের সঙ্গে পুরসভার একশ্রেণির অফিসার, শাসক দলের নেতাদের একাংশের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও ঘুরপাক খাচ্ছে পুরসভার অন্দরেই।

কেন পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে? বর্তমানে পুরবোর্ড চালাচ্ছে ৩ অফিসারকে নিয়ে গঠিক প্রশাসক বোর্ড। নিয়মিত পুরসভার নানা উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখভাল করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীই। বিরোধীদের অভিযোগ, বকলমে পুরসভা চালাচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীই। তিনি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের ব্যাপারে যে নতুন নির্দেশনামা জারি জরুরি তা স্বীকার করেও কাজ এগোতে পারছেন না কেন? মন্ত্রীর দাবি, “আমি পরিবেশ দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলচি। পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিলিগুড়িতে সব রকম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য অনুরোধ করেছি। এটা তো আমার দফতরের হাতে নেই। আমি শিলিগুড়ির স্বার্থে সমন্বয় সাধনের ভূমিকা নিচ্ছি।”

শিলিগুড়ির একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন কিন্তু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জনের ব্যাপারে গয়ংগচ্ছ মনোভাবের আড়ালে নানা ‘স্বার্থ’ রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন। তাঁদের আশঙ্কার, প্লাস্টিক নির্মাতাদের একাংশ নানাভাবে একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে ওই বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া আটকাতে আসরে নেমেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশের অপব্যাখা করার অভিযোগও তুলেছেন আইনজীবীদের অনেকে। তা নিয়ে শিলিগুড়ি শহরে মিটিং-মিছিলও হয়েছে। তবুও বেপরোয়া ভাবে শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের একশ্রেণির নেতা-কর্তারাও প্রকাশ্যে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন, সে কথা জানিয়ে হইহই করে পাড়ায়-পাড়ায় সব দোকানে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফের অবাধে বিক্রি হচ্ছে। তাই সরকারি তরফে কবে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে সে জন্য হাত গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নন শিলিগুড়ির অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতারা আইনি ব্যাখ্যা তুলে শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ছড়াতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে নাগরিকরা স্বেচ্ছায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করলে প্লাস্টিক ক্যারিব নির্মাতাদের কিছুই করার থাকবে না। এমন ভাবনাতে আসরে নেমেছেন অনেকেই।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন