ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে হুমকি তৃণমূল নেতার

ঋণের আবেদন বাতিল হওয়ায় সদলবলে ব্যাঙ্কে গিয়ে তৃণমূলের এক ব্লক নেতা একাধিক বার ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। শুক্রবার মালদহের চাঁচল থানায় ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ পেলেও পুলিশ অবশ্য সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেনি। পুলিশের দাবি, অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্তের পরে পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু, ব্যাঙ্কের অফিসার-কর্মীদের একাংশের দাবি, বিধি মেনে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ধারায় মামলা দায়ের করা উচিত ছিল।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

ঋণের আবেদন বাতিল হওয়ায় সদলবলে ব্যাঙ্কে গিয়ে তৃণমূলের এক ব্লক নেতা একাধিক বার ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। শুক্রবার মালদহের চাঁচল থানায় ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ পেলেও পুলিশ অবশ্য সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেনি। পুলিশের দাবি, অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্তের পরে পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু, ব্যাঙ্কের অফিসার-কর্মীদের একাংশের দাবি, বিধি মেনে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ধারায় মামলা দায়ের করা উচিত ছিল। পুলিশ গোড়া থেকেই মামলাটি লঘু করে দিতে চাইছে বলেও অফিসার-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। এমনকী, পুলিশ অভিযুক্ত নেতার বাড়িতে গিয়েও কোনও তদন্ত না করে ফিরেছে বলেও ব্যাঙ্ক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। মালদহের এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও ওই অভিযোগ আমার নজরে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব।”

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই তৃণমূল নেতার নাম সামিউল ইসলাম। ঘটনাচক্রে, যে দিন থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে, সে দিনই তৃণমূলের চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। সামিউল বলেন, “হুমকি দিইনি। আমি জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ চেয়েছিলাম। সব নথি দিয়েছিলাম। ম্যানেজার আমাকে কয়েক দফায় ঘুরিয়ে জানান, জোনাল অফিস আবেদন মঞ্জুর করেনি। এ ভাবে হয়রানির প্রতিবাদ করায় উনি আমাকে সতর্ক করে জানান, আমার যাতে ঋণ না মেলে তা-ও তিনি দেখবেন। পরে শুনি পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ আমার বাড়িতে এলেও ওই নিয়ে কিছু জানতে চায়নি। ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”

সেই সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকেও সব জানিয়ে হস্তক্ষেপ চাইবেন বলে সামিউল জানান। দলের জেলা সভাপতি বলেন, “সামিউলের সঙ্গে কথা বলব। আইন কেউই নিজের হাতে নিতে পারেন না। সামিউলও নয়, ব্যাঙ্ক ম্যানেজারও নন। সামিউলের দোষ থাকলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

ব্যাঙ্ক ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচলের আজাদপল্লিতে তিন কাঠা জমির উপরে ওই সামিউলের দোতলা বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে মায়ের নামে এক কাঠা ও তার নিজের নামে দু’কাঠা জমি রয়েছে। তিন তলা করার জন্য ঋণ চেয়ে মাস তিনেক আগে ব্যাঙ্কে আবেদন করেন তিনি। ঋণের আবেদন বাতিল হতে মঙ্গলবার ওই তৃণমূল নেতা জনা দশেক সঙ্গী নিয়ে ব্যাঙ্কে চড়াও হয়ে গোলমাল শুরু করেন বলে অভিযোগ। কেন তাঁর আবেদন বাতিল করা হল তা নিয়ে ম্যানেজারকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। ম্যানেজারের টেলিফোন পেয়ে ব্যাঙ্কে পৌঁছোয় পুলিশ। তখনকার মতো পুলিশ তাদের ব্যাঙ্ক থেকে বার করে দেয়। এর পরেও দু’দিন ধরে ব্যাঙ্কে চড়াও হয়ে ম্যানেজারকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুলিশে অভিযোগ জানান ম্যানেজার।

পটনার বাসিন্দা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার আশিস কুমার কর্মসূত্রে চাঁচলে থাকেন। ব্যাঙ্ক সূত্রের দাবি, ম্যানেজারের এক দাদা বিহারের জেলাশাসক। এ রাজ্যের এক মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কও ওই ম্যানেজারের আত্মীয় বলে ব্যাঙ্ককর্মীদের কয়েকজনের দাবি॥ এ দিন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলেন, “আমি দুর্ব্যবহার করিনি। নথি ঠিক না থাকায় জোনাল অফিস আবেদন বাতিল করে দেয়। তার পরেও ওই ব্যাক্তি কেন ঋণ দেওয়া হবে না তা নিয়ে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। হুমকি এতটাই চরমে পৌঁছায় যে পুলিশে অভিযোগ করি। বাকি কাজ পুলিশের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন