মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে গিয়ে মৃতের পরিবারের হাতে গোটা দিন আটকে থাকলেন শিলিগুড়ির তিন ব্যবসায়ী। তাঁদের সারা রাত মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ হয়েছে। ফ্ল্যাট বিক্রির বকেয়া প্রাপ্য আদায় করতেই ওই তিন জনকে আটকে রাখা হয়েছে বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির গজলডোবায়। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের হস্তক্ষেপে এবং দাবি মত টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরই ছাড়া পান ওই ব্যবসায়ীরা।
কিছু দিন আগে শিলিগুড়ির মিলনপল্লিতে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেন তরুণ সরকার। ওই ফ্ল্যাটটি কেনেন শিলিগুড়ির ভারতনগরের তিন ব্যবসায়ী সঞ্জয় ঘোষ, বুবাই বসু এবং সমিত কুণ্ডু। সেই ফ্ল্যাটের দাম ১২ লক্ষ টাকা ঠিক হয়। ৪ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেওয়াও হয়েছে। বাকি টাকা রেজিস্ট্রির সময় দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। এর পরে গজলডোবার নিজের শ্বশুরবাড়িতেই থাকছিলেন তরুণবাবু। এর মাঝে তিনি হঠাৎ মারা গেলে টাকা আদায় হবে কী ভাবে ওই নিয়ে উদ্বেগে পড়েন মৃত তরুণবাবু পরিবার।
সোমবার সকালে ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির নেওড়া মোড় লাগোয়া একটি রিসর্ট থেকে তরুণ সরকারের (৫২) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পরেই, তরুণবাবুর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর রাতে গজলডোবায় শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তরুণবাবুকে শেষ বারের মত দেখতে সোমবার গজলডোবা পৌঁছন শিলিগুড়ির ওই তিন ব্যবসায়ী। এর পরেই তাঁদের টাকা না দিলে ছাড়া হবে না বলে আটকে রাখা হয়। টাকা দিয়ে দেওয়া হবে জানালেও তাঁদের ছাড়তে রাজি হননি তরুণবাবুর পরিবারের লোকজন। তরুণবাবুর স্ত্রী চিন্তামণিদেবী বলেন, “স্বামী মারা গিয়েছে। শিলিগুড়িতে গিয়ে আমার পক্ষে টাকা আদায় সম্ভব নয়। তাই তাঁদের প্রাপ্য মিটিয়ে তবে যেতে বলেছি। মারধর করা হয়নি।”
সেখানে আটকে থাকা শমিত ঘোষকে মোবাইলে ধরা হলে তিনি বলেন, “আমরা পরিচিত লোক মারা গিয়েছে শুনে শেষবার দেখতে যাই। আমাদেরই হঠাৎ আটকে রেখে মারধর করে ওঁর পরিবারের লোকজন। টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। শিলিগুড়িতে বাড়িতে যোগাযোগ করে পরে টাকা আনিয়ে তার পর ছাড়া পেয়েছি। আমরা টাকা এমনিতে দিয়ে দেব বলেছিলাম। তবে এমন করার কোনও দরকার ছিল না।” ওই ব্যবসায়ীদের পাড়ার বাসিন্দা বাসিন্দা তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ সরকার মালবাজারে গিয়ে টাকা-পয়সা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, “অমানবিক ঘটনা। টাকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের সাহায্যে সঞ্জয়বাবুদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”