বিরোধীদের পাশে দাঁড়িয়ে টিএমসিপির রোষে অধ্যক্ষ

নির্বাচনে সব দলকেই সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মালদহের পাকুয়াহাট কলেজের অধ্যক্ষ অতীন ভট্টাচার্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চাপে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলেন তিনি।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

পাকুয়াহাট (মালদহ) শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share:

পাকুয়াহাট কলেজে অধ্যক্ষের ঘরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ টিএমসিপি সদস্যদের। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নির্বাচনে সব দলকেই সমান সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মালদহের পাকুয়াহাট কলেজের অধ্যক্ষ অতীন ভট্টাচার্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চাপে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলেন তিনি।

Advertisement

এই কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তোলার দিন ছিল কেবল বুধবারই। কলেজ কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন, বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র তোলা যাবে। সকাল থেকেই কলেজে ভিড় ছিল টিএমসিপির সদস্য সমর্থকদের। যে ঘর থেকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হচ্ছে তার সামনে তাঁরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। ঢিমেতালে শুরু হয় মনোনয়নপত্র তোলা। এবিভিপি এবং এসএফআই কর্মী সদস্যদের কলেজে ঢুকতেই প্রথমে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সে কথা কানে গেলে অধ্যক্ষ অতীনবাবু তাঁদের কলেজে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেন। পরে অধ্যক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, এবিভিপি ও এসএফআইয়ের সদস্যদের অন্য একটি ঘর থেকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে। ঘরটি খুলেও দেওয়া হয়। কিন্তু টিএমসিপির সদস্যেরা হুমকি দিতে থাকায় তারপরেও এবিভিপি এবং এসএফআই সদস্যেরা সেখান থেকে মনোনয়নপত্র তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ।

অতীনবাবু তখন জানিয়ে দেন, কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে যে সব ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন তাঁদের একটি করে স্লিপ দেওয়া হবে যা দেখিয়ে তাঁরা ১টার পরেও মনোনয়নপত্র তুলতে পারবেন। টিএমসিপির অবশ্য দাবি ছিল, স্লিপ নিতে পারবেন কেবল মনোনয়নপত্র দেওয়া হচ্ছে যে ঘরটি থেকে, সেই ঘরে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরাই। এই নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় স্লিপ দেওয়াও। এবিভিপি এবং এসএফআইয়ের সদস্যেরা তখন অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে অবস্থান শুরু করেন। কলেজের কাছেই মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও শুরু করেন এবিভিপি এবং এসএফআই সমর্থকেরা। ঘণ্টাখানেক পরে অতীনবাবুর নির্দেশে ওই দু’টি ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু হয়। তারপরে অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপেই ওই ছাত্রছাত্রীদের পুলিশি প্রহরায় কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

Advertisement

এরপরেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে টিএমসিপি। তারা দাবি করতে থাকে, বেলা ১টা পর্যন্তই মনোনয়নপত্র দেওয়ার কথা ছিল। তারপরে যাদের মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল বলে ঘোষণা করতে হবে। টিএমসিপির সদস্যেরা অধ্যক্ষ সহ কলেজের শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাখেন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের খগেন মুর্মুর দাবি, “সেই চাপেই শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েন অধ্যক্ষ।” অতীনবাবু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফ্যাক্স করে জানান, এবিভিপি এবং এসএফআইয়ের সদস্যরা যে মনোয়নপত্র নিয়েছেন, তা বাতিল বলে গণ্য করা হোক। এরপরেই ঘেরাও মুক্ত হন অধ্যক্ষ সহ বাকি শিক্ষকেরা।

কলেজের পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান তথা যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুভাষ বর্মন এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন অধ্যক্ষের দিকেই। তিনি বলেন, “নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ পক্ষপাতিত্ত্ব করাতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।” গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলির পর্যবেক্ষক অপূর্ব চক্রবতী জানান, অধ্যক্ষ কলেজের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তাঁদের কাছে পাঠিয়েছেন। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষই নেবেন। তিনি বলেন, “তাঁরা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা আমাদের জানাতে বলা হয়েছে।”

অতীনবাবু অবশ্য এই ঘটনায় মুখ খুলতে চাননি। তিনি কেবল বলেন, “আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এই বিষয়ে কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই।” তবে এসএফআই ও এবিভিপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, তাঁদের সদস্যরা যে মনোনয়নপত্র পেয়েছেন, তা বাতিল করা হলে আন্দোলন শুরু হবে।

এই মাসেই বীরভূমের মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজের অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তী সুষ্ঠু ভাবে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটের দিন পুলিশ ডেকে শাসক দলের বহিরাগত নেতা-কর্মীদের কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বার করে দেন। এ দিন মালদহে অতীনবাবু বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের মনোনয়নপত্র দেওয়ার পরে তাঁদের পুলিশের সাহায্যে নিরাপদে কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন