বাড়ি ফিরল ছেলের নিথর দেহ

পরীক্ষা দিয়ে ছেলে বাড়ি ফিরবে বলে মা মিনতি বর্মন দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তায়। তাঁর চোখের সামনেই উল্টে যায় বাস। দৌঁড়ে গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলেও রয়েছে ওই গাড়িতে। তার পর থেকে কান্না আর থামেনি। মঙ্গলবার মিনতি দেবীর ছেলে বছর আঠেরোর সত্যেনের নিথর দেহ বাড়ি ফিরেছে অ্যাম্বুল্যান্স। কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

সত্যেন বর্মনের বাড়িতে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পরীক্ষা দিয়ে ছেলে বাড়ি ফিরবে বলে মা মিনতি বর্মন দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তায়। তাঁর চোখের সামনেই উল্টে যায় বাস। দৌঁড়ে গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলেও রয়েছে ওই গাড়িতে। তার পর থেকে কান্না আর থামেনি। মঙ্গলবার মিনতি দেবীর ছেলে বছর আঠেরোর সত্যেনের নিথর দেহ বাড়ি ফিরেছে অ্যাম্বুল্যান্স। কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। শুধু সত্যেন নয়, এদিন অ্যাম্বুল্যান্স চেপে একে একে বাড়িতে দেহ আসে তাপস, কাঞ্চন, হিরঞ্জয়, মেঘনাথদের। সে সময় চারদিক থেকে ভেসে আসছে শুধু কান্নার আওয়াজ। ছেলেদের দেহ জড়িয়ে ধরে মা-বাবারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

Advertisement

মিনতী দেবী প্রলাপ বকতে বকতে বলেন, “আর তো কয়েকটা সেকেন্ড ছেলেটা গাড়ি থেকে নেমে যেত। ওইটুকু সইল না। ভগবান এখন কিভাবে বেঁচে থাকব।” ছোট ছেলে গৌতম মুছিয়ে দিচ্ছিলেন মায়ের চোখ

গত সোমবার মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাস উল্টে মৃত্যু হয় ৫ জনের। এদের মধ্যে চারজন তাপস রায় ডাকুয়া, কাঞ্চন বর্মন, সত্যেন বর্মন এবং হিরণ্ময় মণ্ডল মাধ্যমিকের ছাত্র। চারজনই জামালদহের বাসিন্দা। মেঘনাথ মণ্ডল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাড়ি মাথাভাঙার দোলংমোড়ে। তাপসের বাড়িতে তার বাবা চন্দ্রনাথবাবু, মা সুশীলা দেবী, ছোট দুই বোন কেঁদেই চলেছেন। সুশীলা দেবী বলেন, “আমি বেঁচে থাকব কিভাবে?” পাশেই কেশরহাটে কাঞ্চনের বাড়ি। দিনমজুর পরিবারের ছেলে কাঞ্চনের প্রতিবন্ধী এক বোন রয়েছে। তার মা নীলেশবরী বর্মন বলেন, “পরীক্ষা দিতে গিয়ে ছেলের মৃত্যু হবে এমনটা জানলে ওকে পরীক্ষা দিতেই পাঠাতাম না।” হিরন্মের দুই বোন ভাগ্য, সুস্মিতা বলেন, ‘ভাইকে ছাড়া থাকব কী ভাবে?”

Advertisement

বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, চ্যাংরাবান্ধা থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ফেরার পথে চলন্ত গাড়িতে সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করছিলেন চালক শোভেন বর্মন। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি উল্টে যায়। ৫ জনের মৃত্যু হয়। বাকি ২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে ১৮ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাদের কেউই এদিন পরীক্ষায় বসতে পারেনি। কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, অভিযুক্ত চালককে এদিন সন্ধ্যায় রানীরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিন জামালদহে গিয়ে নিহতদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করেন পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি দলের পক্ষ থেকে পরিবারগুলির হাতে ২০ হাজার টাকা করে তুলে দেন। তিনি বলেন,“কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সব জানাব। পরিবারগুলির পাশে আমরা থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন