বন্দিকে পিটিয়ে খুন মেডিক্যালে

হাসপাতালে সেলের মধ্যেই এক বন্দিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে অপর এক বন্দির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

খুনে অভিযুক্ত নিখিল রায়। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে সেলের মধ্যেই এক বন্দিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে অপর এক বন্দির বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত বন্দি ঘটনার পর ভিতর থেকে সেলের দরজা আটকে বসে থাকলে বিপত্তি দেখা দেয়।

Advertisement

জরুরি বিভাগ লাগোয়া অসুস্থ বন্দিদের রাখার সেলে এ ধরনের ঘটনায় রোগীর আত্মীয় পরিজন, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। ডিসিপি(ট্রাফিক) শ্যাম সিংহ, এসিপি (পশ্চিম) মানিক লোধের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী পৌঁছয়। পরে যান পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। ঘণ্টাখানেক ধরে নানা ভাবে বুঝিয়েও অভিযুক্ত দরজা না খোলায় শেষে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত বন্দিকে ওই সেলেই রাখা হয়েছে।

পুলিশ এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম উপেন বর্মন (৭২)। তাঁর বাড়ি মাথাভাঙায়। তিনি গ্রেটার কোচবিহারের নেতা। ৮ এপ্রিল অসুস্থ ওই বন্দিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

অভিযুক্ত বন্দির নাম নিখিল রায়। বয়স চল্লিশের কোঠায়। বাড়ি ধূপগুড়িতে। একটি খুনের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রেল অবরোধ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন উপেনবাবু। সে সময় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠি চালালে তিনি জখম হন। বন্দিদের সেলে ওই দুই জনই ছিলেন এ দিন। বিছানায় শুয়েই ছিলেন উপেনবাবু। স্যালাইনের স্ট্যান্ড দিয়ে তাঁর বাঁ কানের কাছে মাথার দিকে বারবার আঘাত করে অভিযুক্ত। ওই অংশ থেঁতলে গিয়েছে। এই ঘটনায় সেলে অসুস্থ বন্দিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেলে নজরদারি করতে লাগোয়া ঘরে পুলিশের এক সাব ইন্সপেক্টর এবং তিন জন পুলিশ কর্মী রয়েছেন। তাঁদের ঘরের দিকে থাকা একটি ছোট জানলা দিয়ে সেলের ভিতরে বন্দিরা কী করছেন দেখা যায়। ঘটনা জেনে দ্রুত তাঁরা কিছু করতে পারেননি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এক বন্দি সেলের মধ্যে থাকা অপর একজনকে পিটিয়ে মেরেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ কর্মী এবং আধিকারিক যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা কী করছিলেন সে সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অভিযুক্ত নিখিলের মানসিক পরিস্থিতি ঠিক ছিল না বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন।

এ দিন পৌনে এগারোটা নাগাদা ঘটনার সূত্রপাত। দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা শোনেন সেলের ভিতর থেকে চিৎকার। তাঁরা দেখেন নিখিল স্যালাইনের স্টান্ড হাতে নিয়ে। ঘরের একদিকের দেওয়ালের কাছে পাতা শয্যায় শুয়ে রয়েছেন অপর বন্দি। তার মাথার একদিক থেঁতলে গিয়ে চোখ কান গলার অংশ রক্তে ভিজে রয়েছে। পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে ভক্তিতত্ত্বসারের একটি বই। সেলের গ্রিলের তালা খুলে ভিতরের দরজা খুলতে গেলে দেখেন তা ভিতর থেকে বন্ধ করা। পুলিশ কর্মীদের ঘরের জানলা দিয়ে দেখেন দুটি লোহার খাট টেনে এনে দরজা বন্ধ করে রেখেছে অভিযুক্ত বন্দি। দায়িত্বে থাকা সাব ইন্সপেক্টর পুলিশ ফাঁড়িতে এবং থানায় ফোন করে জানালে পুলিশ পৌঁছয়।

ততক্ষণে ঘটনা চাউর হতেই জরুরি বিভাগ থেকে সেলের সামনে দিয়ে যাওয়া করিডরে ভিড় জমে যায়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে থাকা ফাঁড়ি, থানা থেকে পুলিশ পৌঁছয়। বারবার বোঝালেও অভিযুক্ত বন্দি দরজা খুলছে না দেখে দরজা ভাঙা হয়। তা বুঝে সেলের ভিতরে থাকা শৌচাগারে ঢুকে পড়ে অভিযুক্ত নিখিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গিয়ে ততক্ষণে জখম বন্দি উপেন বর্মনকে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন তিনি মারা গিয়েছেন। এরপর চার পুলিশ কর্মী নিখিলকে শৌচাগার থেকে বার করেন। তাকে আপাতত ওই সেলেই রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা জানিয়েছেন, উপেনবাবুর ডান হাত ভাঙা ছিল। গত শুক্রবার তাঁর হাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন