বন্ধ বাগানে ওষুধ, স্বেচ্ছাসেবীরা

ডুয়ার্সের বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াল পাহাড়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। গত আট মাস বন্ধ হয়ে থাকা রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের শ্রমিকদের সাহায্য করতে বৃহস্পতিবার দু’জন চিকিৎসক নিয়ে বাগানে পৌঁছন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করে অসুস্থদের হাতে ওষুধ তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিলয় দাস

বানারহাট শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:২২
Share:

ওষুধ নিতে ভিড় বন্ধ বাগানের হাসপাতালে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ডুয়ার্সের বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াল পাহাড়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। গত আট মাস বন্ধ হয়ে থাকা রেডব্যাঙ্ক চা বাগানের শ্রমিকদের সাহায্য করতে বৃহস্পতিবার দু’জন চিকিৎসক নিয়ে বাগানে পৌঁছন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বাগানের শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করে অসুস্থদের হাতে ওষুধ তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

অল ইন্ডিয়া ওমেন কনফারেন্স-এর কার্শিয়ঙের শাখার সদস্যরা এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ডুয়ার্সের বানারহাট থানা এলাকার রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে পৌঁছন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কার্শিয়ং মহকুমা হাসপাতালের দুই চিকিৎসক দেবাশিস রায় ও চম্পক দে সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা। গত বছর ১৯ অক্টোবর বাগান বন্ধ হবার পর থেকে ওই বাগানের হাসপাতালে তালা ঝুলছে। বাগান বন্ধ থাকার মতোই চিকিৎসা পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে শ্রমিকদের। ইতিমধ্যে রোগে ভুগে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে বাগানের ২৭ বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া ওষুধ পেয়ে শ্রমিকরা অনেকেই আশ্বস্ত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ সভাপতি অলকা দে বলেন, “রেডব্যাঙ্ক বাগানের দুরবস্থার কথা জানার পর আমরা অর্থ সংগ্রহ করে ওষুধ সহ কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করি। বাগানটির অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা শুধরেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা আবার এখানে আসব।”

শুধু চিকিৎসা পরিষেবাই নয়, বাসিন্দারা দাবি করেছেন বাগানের যে গাড়িতে চাপিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাত কিলোমিটার দূরে বানারহাটের তিনটি স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, তাও বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্ররা অনেকেই স্কুলে না গিয়ে পরিবারের অভাব মেটাতে ডায়না নদীতে পাথর ভাঙার কাজ করেছে বলেও অভিযোগ। কয়েক মাস আগে বাগানে এসেছিলেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী। তারপরে বাগানে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়। কয়েকটি নলকূপ বসানো হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে উদ্বেগে শ্রমিকরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এক সংস্থাকে ওই বাগানে সপ্তাহে একবার চিকিৎসা শিবির করার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও, সেই পরিষেবা ঠিক ভাবে মেলে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

এ দিন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে ২৫০ শিশুকে পোশাক দেওয়া হয়। শিশুদের হাতে তাঁরা চকোলেট ও বিস্কুট তুলে দেন। দু’জন চিকিৎসক চার ঘণ্টা ধরে ২০০ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। ৫০ জন মহিলার রক্তের নমুনা তাঁরা এ দিন সংগ্রহ করেন। চিকিৎসক দেবাশিস রায়ের কথায়, “কয়েক জনের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতা রোগ দেখা গিয়েছে।” বাগানের বাসিন্দারা জানান, ফি মাসে অন্তোদ্যয় যোজনার ৫ কিলো চাল ও ৪ কিলোগ্রাম গম মেলে।

গত অক্টোবর মাস থেকে টানা ছয় মাস বৃষ্টি না হবার কারণে গাছ থেকে নতুন পাতা মিলছিল না। শ্রমিকদের ঘরে ঘরে অভাব চরম পর‌্যায়ে পৌঁছয় বলে অভিযোগ। অনেকে পরিবার চালাতে ভুটান ও ভিন রাজ্যে গিয়ে দিন মজুরের কাজও শুরু করেন। তবে এক মাস ধরে বৃষ্টি হওয়ায় শ্রমিকরা পাতা তোলার কাজ শুরু করেন। কেজি পিছু ১০ টাকা দর হিসাবে এক একজন ১০ থেকে ১৫ কিলোগ্রাম কাঁচাপাতা তুলে ঠিকাদারের হাতে তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। সে পাতা বিক্রির টাকার একটি অংশে মাসখানেক হল আবার বাগান থেকে স্কুলে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছে। বাগান শ্রমিক জিতরাম নায়েক বলেন, “এভাবে ক’দিন চলবে। আমরা চাই বাগান সরকার অধিগ্রহণ করুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন