বন্ধ রেডব্যাঙ্কে ফের মৃত্যু, রায়পুর বাগানে গেলেন না শিল্পোদ্যোগীরা

বন্ধ বাগানে ফের বিনা চিকিৎসায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ডুয়ার্সের বানারহাট থানার রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মৃতের নাম সানি তামাঙ্গ (৫২)। তিনি ৩ মাস আগে হৃদরোগে শয্যাশায়ী হন। তাঁর দুই ছেলেরা বাইরে পাথর ভাঙার করেন। স্ত্রী ঠুলি বাগানের কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করে সংসার চালান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বানারহাট ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share:

রবিবার এই ছবি যখন তোলা হয় তখনও বেঁচে রেডব্যাঙ্ক বাগানের শ্রমিক সানি তামাঙ্গ। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বন্ধ বাগানে ফের বিনা চিকিৎসায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ডুয়ার্সের বানারহাট থানার রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মৃতের নাম সানি তামাঙ্গ (৫২)। তিনি ৩ মাস আগে হৃদরোগে শয্যাশায়ী হন। তাঁর দুই ছেলেরা বাইরে পাথর ভাঙার করেন। স্ত্রী ঠুলি বাগানের কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু, চিকিৎসার খরচ তোলার সামর্থ ছিল না। হাসপাতালে রেখে রোজ গিয়ে দেখভাল করার উপায়ও ছিল না। তাই স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষক দল সানিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিলেও ঠুলি পাঠাতে চাননি। অবশেষে ধুঁকতে ধুঁকতে সোমবার দুপুরে সানির মৃত্যু হয়। ৯ মাস ধরে ওই বাগানটি বন্ধ। এর মধ্যে এই নিয়ে ২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হল ওই বাগানে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার অবশ্য বলেছেন, “ওই রোগীকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছিলাম। বাড়ির লোকজন রাজি হননি।” তাঁর স্ত্রী জানান, “হাসপাতালে স্বামীকে ভর্তি করানো হলে বাইরের ওষুধের টাকা জোগাড় কী ভাবে হবে এবং আমি সেখানে পাহারা থাকার সময়ে কী ভাবে খাব সেটা ভেবেই হাসপাতালে যাইনি। প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে ছেলেদের বাড়ি আসার অপেক্ষায় ছিলাম। সোমবার তাঁর দুই ছেলে ধীমান ও ময়দিল বাড়িতে পৌঁছয়। তারা বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তখনই মৃত্যু হয় তাঁর।”

রায়পুরে শিল্পোদ্যোগীদের অপেক্ষায় শ্রমিকেরা। সোমবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

Advertisement

এই অবস্থায় বন্ধ বাগান খোলানোর দাবিতে ক্রমশ শ্রমিকেরা জোট বাঁধতে শুরু করেছেন। রেডব্যাঙ্ক, রায়পুরের মতো বন্ধ বাগানের শ্রমিকেরা রোজই নেতা-কর্তাদের জানিয়ে দিচ্ছেন, ত্রাণ দিয়ে সাময়িক সমস্যা মিটলেও স্থায়ী সমাধান হবে না। উপরন্তু, রবিবার তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী দলের দুই সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে যান। তিনি তা খোলার আশ্বাসও দেন। বাগান খোলানোর ব্যাপারে একজন শিল্পোদ্যোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। সৌরভবাবুর কথা অনুযায়ী, এ দিনই হবু মালিকের বাগানে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো বাগানের প্রত্যাশার পারদ চড়তে থাকে। কিন্তু, বিকেল পর্যন্ত বাগানে কোনও শিল্পোদ্যোগী যাননি। ফলে হতাশ হন শ্রমিকরা। ফাঁপড়ে পড়েন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রাতে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা চেয়েছি বাগান মালিক ও শিল্পোদ্যোগী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিন। বিকেলে খবর পেয়েছি ওঁরা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসতে চাইছেন। ৯ জুলাই জলপাইগুড়িতে বৈঠক হবে।”

এ দিন রায়পুরের বাসন্তী মুণ্ডা, সরস্বতী ওঁরাও, ফাগু মুণ্ডার মতো শ্রমিকেরা জানান, “বাগান কিনবে বলে কতজন আসবে শোনা যায়। না আঁচালে বিশ্বাস নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন