আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে সেচমন্ত্রী। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রকল্পে কত টাকা বাকি রয়েছে, এবং কোন প্রকল্প অনুমোদন পায়নি ৭ দিনের মধ্যে তার বিস্তারিত তথ্য জানানোর নির্দেশ দিলেন সেচমন্ত্রী। সেই তালিকা নিয়েই দিল্লিতে মোদী-সরকারের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে দেখা করবে রাজ্যের প্রতিনিধি দল। আগামী ১০ জুলাই রাজ্য বিধানসভা র অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে রাজ্যের প্রতিনিধি দল দিল্লি যাবে বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির দোমাইলে সেচ দফতরের অফিসে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য তৈরি করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিকেলে মূলত দু’দফায় বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী। প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেচ সহ আবহাওয়া দফতর, কেন্দ্রীয় জল আয়োগ এবং বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী। দ্বিতীয় দফায় দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খতিয়ান চেয়েছেন মন্ত্রী।
গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজ্য থেকে এক প্রতিনিধি দলের দিল্লি যাবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন দলের বিধায়করা সেই প্রতিনিধি দলে থাকবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছিলেন। সেচমন্ত্রী রাজীববাবু এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সেই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। সেচ দফতর সূত্রের খবর, দিল্লিতে দরবারের প্রস্তুতি হিসেবেই এ দিন সেচমন্ত্রী শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের কাছে অন্তত দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো রয়েছে, যেগুলির বরাদ্দ এখনও মেলেনি। ব্রহ্মপুত্র বোর্ডে রাজ্যের স্থায়ী সদস্যপদের বিষয়টিও বকেয়া রয়েছে। তেমনিই বিপর্যয় ত্রাণ তহবিলেও রাজ্যের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রের থেকে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক সমস্যাও রয়েছে উত্তরবঙ্গে। নেপাল এবং বাংলাদেশ সীমান্তে নদী ভাঙন মোকাবিলায় কেন্দ্রের বরাদ্দ চেয়েও না পাওয়ার অভিযোগ সেচ কর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়েছেন। এ দিনের বৈঠকে সেই সব অভিযোগ এবং দাবির বিস্তারিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন সেচমন্ত্রী।
বৈঠকের শেষে রাজীববাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের থেকে সাহায্য পাওয়া যায়নি। আগে আমাদের সহযোগী সরকার কেন্দ্রে থাকলেও, পাইনি, পরেও রাজ্য বঞ্চিতই থেকেছে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রের কাছে প্রতিনিধি দল নিয়ে যাওয়া হবে। কেন্দ্রের কাছে যে দাবি-অভিযোগ পেশ করা হবে, সেগুলির বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।” এ দিনের বৈঠকে উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বৈঠকে। মাটির বাঁধ পরিদর্শন করতে দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সাইকেল দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। রাজ্য জুড়ে ওই কাজের জন্য ৬০০ কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার পুর্বাভাস পেতে আগামী বছরে মালদহে অত্যাধুনিক ‘ডপলার’ যন্ত্রও বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেচ দফতরের দেওয়া জমিতে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর ডপলার বসাবে। বন্যা পরিস্থিতির নজরদারিতে টোল ফ্রি হেল্প লাইন সহ উত্তরবঙ্গে ৬টি কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “বন্যা প্রস্তুতির মোকাবিলায় যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। আশা করছি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব একটা বেশি হবে না।”