বসুনিয়া বাড়ির পুজো।—নিজস্ব চিত্র।
তিস্তা পারের বসুনিয়া বাড়িতে দেবী আসেন রাজবংশী বধূর সাজে। পরনে আটপৌরে শাড়ি। মুখের আদলে মঙ্গোলীয় জনজাতির ছাপ স্পষ্ট।
ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বসুনিয়া পরিবারের এই পুজোর বয়স ২০৪ বছর। বসুনিয়া পরিবারের লোকজন দেবীকে ঘরের মেয়ে ভাবতেই অভ্যস্ত। তাই দেবী প্রতিমায় পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে পারেন না তাঁরা। পরিবারের অভিভাবক সুনীলবাবুর কথায়, “দেবী ঠাকুরানি বাইরের কেউ নন। ঘরের মেয়ে। যে যাই বলুন, আমাদের দেবীর আদলের কোনও পরিবর্তন করা হবে না।”
রাজবংশী সমাজে দুর্গা দেবী ঠাকুরানী নামে পরিচিত। বসুনিয়া পরিবারেরও পুজো হয় ওই নামেই। এখানে দেবীর পরনে লাল তাঁতের শাড়ি। চোখ, নাক ও মুখের গড়নে ঘরের মেয়ের ছাপ। গায়ে আটপৌরে গয়না। অনাড়ম্বর পুজোর আয়োজন, তেমনই মণ্ডপসজ্জা। খড়ের ছাউনি দেওয়া সাধারণ কুটির। তিনদিকে পাটকাঠির বেড়া। গ্রামের আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতো।
বসুনিয়া পরিবারের নথি থেকে জানা গিয়েছে, ১৮১০ সালে ধনবর বসুনিয়া ওই পুজোর সূচনা করেন। তিনি কোচবিহার রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে তত্কালীন চাপগড় পরগনার আমগুড়ি গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। জোতদার ছিলেন তিনি। শুরুতে এই পুজোকে যাত্রা পুজো বলা হতো। পরে তা পাল্টে হয় দেবী ঠাকুরাণীর আরাধনা। যদিও রাজবংশী আধুনিক প্রজন্ম দুর্গা পুজো বলতেই অভ্যস্ত।
পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম পেশায় শিক্ষক সুনীল বসুনিয়া জানান, তাঁর পূর্বপুরুষ ধনবর বসুনিয়া প্রথম জঙ্গল ঘেরা ডুয়ার্সে দেবী আরাধনার সূচনা করেন। কোচবিহার রাজ পরিবারের পুজো কেমন হয়, তা জানতেন তিনি। তাই তাঁর প্রতিমাতেও রাজবাড়ির দেবী প্রতিমার সাজের আদল লক্ষ্যনীয়।
বসুনিয়া পরিবারের নথি থেকে জানা গিয়েছে, আগে ওই পুজো দেখার জন্য বাংলাদেশের রংপুর থেকে প্রচুর মানুষ আমগুড়িতে ভিড় করতেন। তাঁদের পাত পেড়ে খাওয়ানো হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোতদারি প্রতাপ আর নেই। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তথা লোক সংস্কৃতি গবেষক দীপক রায় বলেন, “বসুনিয়া বাড়ির পুজোয় ডুয়ার্সের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আধুনিক গবেষকদের কাছে এই পুজো খুবই আকর্ষণীয়।”