ভাঙা সেতু, বিকল গাড়ি নিয়ে ধুঁকছে কুঞ্জনগর

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে গোড়া থেকেই উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পের উপর জোর দেওয়ার কথা বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখে যাই বলুন না কেন, তার কোনও প্রতিফলন চোখে পড়ছে না আদতে। উল্টে অভিযোগ উঠছে, বাম আমলে যে সব পর্যটনকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছিল, সেগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

Advertisement

নিলয় দাস

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১০
Share:

দোলনা সেতু ভেঙে পড়েছে কুঞ্জনগরে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে গোড়া থেকেই উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পের উপর জোর দেওয়ার কথা বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখে যাই বলুন না কেন, তার কোনও প্রতিফলন চোখে পড়ছে না আদতে। উল্টে অভিযোগ উঠছে, বাম আমলে যে সব পর্যটনকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছিল, সেগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

Advertisement

জলদাপাড়া বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এক শৃঙ্গি গন্ডার। জলদাপাড়ায় জঙ্গলভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বাম আমলে তৈরি করা হয়েছিল কুঞ্জনগর ও খয়েরবাড়ি পর্যটন কেন্দ্র দু’টি। শুরু থেকেই এই দু’টি কেন্দ্র নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে ভালই সাড়া পড়ে। খয়েরবাড়ি জঙ্গলের মাঝে এক কিলোমিটার লোহার জাল দিয়ে মোড়া এলাকায় চিতা বাঘও ছাড়া হয়েছিল। তার বেড় দিয়ে ব্যাটারিচালিত গাড়িতে ঘুরে হাতের নাগালে চিতাবাঘ দেখতেন পর্যটকেরা। গত দু’বছর ধরে ব্যাটারিচালিত গাড়ি গাড়ি দু’টি বিকল হয়ে রয়েছে। ফলে সেই সাফারি আর হয় না। ওই পর্যটন কেন্দ্রটিকেও নতুন করে সাজিয়ে তোলা না হওয়ায় পর্যটকদের ঢল ক্রমশ কমছে।

খয়েরবাড়ির পাশাপাশি করুণ দশা কুঞ্জনগরের জলদাপাড়া জঙ্গলেরও। তোর্সা নদীর পাড়ে ১৯৯৬ সালে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ওই পর্যটন কেন্দ্রটি। দু’টি চিতা বাঘ, সম্বর ও চিতল হরিণ ছিল তাতে। বোটিং করতে পারতেন পর্যটকেরা। ছিল দোলনা সেতু। ছোটদের হাতির পিঠে চড়িয়ে এলাকা ঘোরানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন সেখানকার অবস্থা তথৈবচ। শীত আসলেও আর পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে না। এক বছর আগেই ভেঙে গিয়েছে নদীর উপর কাঠের সেতুর বেশ কয়েকটি পাটাতন। তাই সেতুতে চড়া এখন বন্ধ। মাস চারেক আগে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন নতুন করে হাতির পিঠে চড়ে ভ্রমণ চালু করলেও দু’মাস ধরে সেটি বন্ধ পড়ে রয়েছে। দু’টি চিতাবাঘের জায়গায় মাত্র একটি চিতা বাঘ এখন অবশিষ্ট রয়েছে। হরিণ বিচরণ কেন্দ্রে সবুজ ঘাস না থাকায় বাইরে থেকে ঘাসপাতা এনে হরিণের খাদ্য সংস্থান করছেন বনকর্মীরা। কার্যত কুঞ্জনগরের পর্যটন কেন্দ্রে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন পর্যটকেরা।

Advertisement

তবে কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখরের বক্তব্য, “লোকজন কম আসায় এলিফ্যান্ট রাইডিং বন্ধ রেখেছি। সেটি শীঘ্র চালু হবে। সেতু মেরামতি করা হবে। আর খয়েরবাড়িতে নতুন ব্যাটারিচালিত গাড়ি কেনা হবে।” তবে ডিএফও-র কথায় আশার আলো দেখছেন না বনকর্মী থেকে বন সুরক্ষা কমিটির লোকজনেরা।

খয়েরবাড়ি বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য সুকুমার দাসের কথায়, “পর্যটকদের টানতে নতুন করে উদ্যোগী হওয়া উচিত বন দফতরের।”

বন পর্যটন নিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, “পর্যটন শিল্পের উন্নতির কথা এই সরকার মুখেই বলছে। আমাদের সময়ে তৈরি করা কিছু পরিকাঠামো রঙ করে নতুন বলে চালানো হচ্ছে। কুঞ্জনগর বা খয়েরবাড়ির অবস্থা সত্যিই করুণ। এই সরকারের আমলে উন্নয়নের আশা করাই বৃথা।”

তবে রাজ্যের বনমন্ত্রীর অবশ্য বলছেন, “কুঞ্জনগর ও খয়েরবাড়িকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা বহু উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করছি। পরিকল্পনা মাফিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে বন ও পর্যটন দফতরের যৌথ কমিটি গড়া হয়েছে। তারা পরিকল্পনা দিলে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন