ভাঙন থেকে বাঁচার খুশি ফুলহার পাড়ের পুজোয়

বন্যা-ভাঙনের সঙ্গে প্রতি বছর লড়াই করতে হয় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ফুলহার পাড়ের বাসিন্দাদের। অনেকেরই ঘরদোর, খেতি জমি তলিয়েছে ফুলহারের গর্ভে। চোখের জলে পুরনো ভিটে ছেড়ে কত কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। তার পরেও রেহাই নেই। যত পিছিয়ে যান। আগ্রাসী ফুলহারও ততই এগিয়ে আসে। ঘরদোর, পথঘাট, খেত ভাসায়।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২০
Share:

বন্যা-ভাঙনের সঙ্গে প্রতি বছর লড়াই করতে হয় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ফুলহার পাড়ের বাসিন্দাদের। অনেকেরই ঘরদোর, খেতি জমি তলিয়েছে ফুলহারের গর্ভে। চোখের জলে পুরনো ভিটে ছেড়ে কত কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। তার পরেও রেহাই নেই। যত পিছিয়ে যান। আগ্রাসী ফুলহারও ততই এগিয়ে আসে। ঘরদোর, পথঘাট, খেত ভাসায়। খেতের ফসল ঘরে ওঠার আগেই ঠাঁই হয় ফুলহারের গর্ভে। কোন খেত তারাপদ সাহার, কোন বাড়ি আইনাল হকের তা মানে না আগ্রাসী ফুলহার। বর্ষার পর শরতে পুজোর মুখে তাই প্রতি বছর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যার সঙ্গে ওঁদের লড়াই করতে হয়। বর্ষায় বানভাসির পর উঁকি দেয় শরত। ফুলে ফুলে সাদা হয়ে ওঠে ফুলহার পাড়ের কাশবন। একই সঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন ওরা। সেই আনন্দে অবশ্য কিছুটা হলেও মিশে থাকত বিষণ্ণতা।

Advertisement

এ বার এক যুগ বাদে সেই বিষন্নতা নেই মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ফুলহার পাড়ের মিহাহাট, তেলজান্না, চাঁদপুর, রশিদপুর-সহ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, এক যুগেরও বেশি সময় বাদে এ বছর বন্যা-ভাঙনের কবলে পড়তে হয়নি তাদের। আবার ঘটনাক্রমে এ বারই ৫০ বছরে পড়ল ফুলহার পাড়ের মিহাহাট সর্বজনীন দুর্গোৎসব। ফলে বাড়তি আনন্দ নিয়েই সম্প্রীতির ওই পুজোকে ঘিরে শারদোৎসবে মেতে উঠেছেন ফুলহার পাড়ের ১০টি এলাকার বাসিন্দারা।

পুজো কমিটির সম্পাদক রাজেশ মণ্ডল বলেন, হারানোর যন্ত্রনাটা ফুলহার পাড়ের প্রতিটি বাসিন্দাকেই কমবেশি ভোগ করতে হয়েছে। এ বার বন্যা-ভাঙ্গনের মুখে পড়তে হয়নি। ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় বাড়তি আনন্দ রয়েছেই। দীর্ঘ পাঁচ দশকেও এই এলাকার সম্প্রীতি টোল খায়নি।

Advertisement

এখন যেখানে পুজো হয় তা অবশ্য আগে হত এলাকার হাটের পাশে একটি মণ্ডপে। সেখানে একসময় বিরাট হাট বসত। হাটের নামেই ওই এলাকার নাম হয় মিহাহাট। কিন্তু দেড় দশক আগেই ফুলহারের গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে হাট-সহ মিহাহাট গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। তলিয়ে যায় পুজোর জায়গাও। তারপর সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরের মোড়ে ওই পুজো সরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

এখন ঘরবাড়ি হলেও একসময় ওই এলাকাটি ছিল নির্জন। ফুলহার বাঁধ তৈরি হওয়ার পর সাতের দশকে তা উদ্বোধন করতে সেখানে গিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার পর অনেকেই এলাকাটিকে দুর্গামোড় বলে থাকেন। অধিকাংশ বাসিন্দাই খেটে খাওয়া মানুষ। তাই চাঁদার জোরাজুরি নেই। যার যা সাধ্য তা দিয়েই পুজোর আয়োজন হয়। তার পর পুজোর কটা দিন সব সম্প্রদায়ের মানুষ মেতে ওঠেন আনন্দে। ফুলহারের বাঁধে চার দিন ধরে চলে মেলা। আলকাপ, যাত্রাপালা হয়। তেলজান্নার মফিজুদ্দিন আহমেদ, মিহাহাটের আইনাল হকরা বলেন, “ফুলহার আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। বছর ভর একসঙ্গে বাস করি। দুঃখের সঙ্গে আনন্দটাও একসঙ্গে করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন