ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্য একই বাসকে দুই জেলা প্রশাসনের ‘রিজার্ভ’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলায়। একই দিনে দু’জেলায় ভোট। তাই ভোটের দিন কোন জেলা প্রশাসনের কাছে বাস পাঠানো হবে তা নিয়েই সংশয়ে পড়েছেন বাস মালিকেরা।
অভিযোগ, যে বাসকে ভোটের কাজে ব্যবহার করার জন্য জলপাইগুড়ি জেলা নোটিস পাঠিয়েছে, সেই বাসকেই আবার নিজেদের তালিকায় রেখেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। দুই জেলার মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মালিকদের একাংশের অভিযোগ। সেই সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবের কারণে তাঁদের শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন বাস মালিক সংগঠনের দাবি।
আগে থেকে নোটিশ দিয়ে রাখার পরেও, ভোটের কাজে বাস না পাঠালে কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাস মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনও এক জেলাকে বাস ব্যবহার করতে দিলেও, অন্য জেলার নোটিশ খেলাপের অভিযোগে শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে সংগঠনগুলি মনে করছে। সে কারণেই দুই জেলা প্রশাসনকে মিলিত ভাবে স্মারকলিপি দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে সংগঠনগুলি। জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার রামদাসী মিনা বলেন, “এটা কোনও সমস্যা নয়। প্রথম ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। পরে সবকিছু খতিয়ে দেখেই নির্দেশ দেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, অবাধে ভোট করতে যে বিপুল সংখ্যক বাস প্রয়োজন তা জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তাদের। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রেই ভোট পরিচালনা করতে ছোট বড় মিলে অন্তত ৫০০টি বাস প্রয়োজন প্রশাসনের। ভোট কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে পাঠানো, ফিরিয়ে আনা-সহ অন্য কাজ মিলিয়ে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রেও আরও শ’পাঁচেক বাস প্রয়োজন। সম সংখ্যক বাস প্রয়োজন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রেও। এ ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বাসের প্রয়োজন পুলিশ প্রশাসনেরও। জলপাইগুড়ি জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্র মিলিয়ে অন্তত শ’তিনেক বাস প্রয়োজন। দার্জিলিং জেলাতেও পুলিশের বাস প্রয়োজন। দুই জেলা মিলে অন্তত হাজার দু’য়েক বাস প্রয়োজন। যদিও, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “কত বাহিনী আসবে তার পরিষ্কার চিত্র এখনও মেলেনি, তাই বাসের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
সাধারণত ভোটের কাজে ব্যবহার করার জন্য জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ পৃথক ভাবে বাস জোগাড় করে। পুলিশের তরফে কোনও বাসকে আগে থেকে চিহ্নিত করা হলে, সংশ্লিষ্ট বাসের কিছু নথিপত্র জমা রেখে বাসের কাঁচে ‘পি’ লেখা চিহ্ন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আবার প্রশাসনের সড়ক পরিবহণ দফতরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মালিকদের নোটিশ পাঠানো হয়। এখানেই বিপত্তির শুরু। যেদিন কোনও বাসের নথি নিয়ে পি চিহ্ন লাগানো হল, তার কয়েকদিন আগেই হয়ত অন্য জেলা প্রশাসন সেই বাস মালিককে নোটিশ পাঠিয়েছে। এর উল্টোটাও ঘটেছে অনেক ক্ষেত্রে। উত্তরবঙ্গের বেসরকারি বাস সংগঠনগুলির কো অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “প্রশাসনের কাছে বাস জোগাড় করা সমস্যা হতে পারে, কিন্তু তার একটা পদ্ধতি রয়েছে। একটি বাসকে একাধিক জেলা প্রশাসনের থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের কী করণীয় তা প্রশাসনকেই জানাতে হবে।” জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি সুপার বাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবু দে জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনের ৫০টি বাসকে দুই জেলার তরফেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিবুবাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে শিগগিরি আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছি।”