সেচের অভাবে মাঠে পুড়ছে ধান

ভোল্টেজ কমে অকেজো পাম্প

অবৈধ ভাবে সাব মার্সিবেল পাম্প বসানোর জেরে চলছে লো-ভোল্টেজ, আর লো-ভোল্টেজে বিদ্যুত্‌-চালিত সাব মার্সিবেল সেচ পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। জলসেচের অভাবে বিঘের পর বিঘের জমির বোরো ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

অবৈধ ভাবে সাব মার্সিবেল পাম্প বসানোর জেরে চলছে লো-ভোল্টেজ, আর লো-ভোল্টেজে বিদ্যুত্‌-চালিত সাব মার্সিবেল সেচ পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। জলসেচের অভাবে বিঘের পর বিঘের জমির বোরো ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের গুড়ইল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ওই ঘটনার জেরে কয়েকশ চাষি চরম বিপদের মুখে। জমির ধান বাঁচাতে এলাকার চাষিরা গত সপ্তাহে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও গিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে চাষিদের শান্ত করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি পাল্টায়নি বলে ক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ। বোরো চাষিরা জানিয়েছেন, বিদ্যুত্‌ দফতর থেকে এক মৌজায় ৫ সাবমার্সিবল পাম্প বসাতে সংযোগ দেওয়া হয়। বিদ্যুত দফতরের একাংশ কর্মীর মদতে অবৈধভাবে ২০টি সাবমার্সিবল পাম্প মেশিন বসে গিয়েছে। ট্রান্সফর্মার লোড টানতে না পারায় কোনও পাম্পই চলছে না।

Advertisement

গুড়ইল গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সরস্বতী টুডু বলেন, “লো ভোল্টেজের ফলে সাবমার্সিবেল পাম্প চলছে না। জলের অভাবে ইতিমধ্যে এক হাজার বিঘার উপর জমির বোরো ধান মরে গিয়েছে। ঋণ করে চাষিরা ধান লাগিয়েছিলেন। ভয়াবহ অবস্থার কথা ব্লক প্রশাসন থেকে বিদ্যুত্‌ বণ্টন দফতরের আধিকারিকদের জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না।” বিডিও জর্জ লেপচা বলেন, “বিদ্যুত্‌ বণ্টন কোম্পানির সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়রকে এই বিষয়টি দেখতে বলেছি।” তপন ব্লকের বণ্টন কোম্পানির ওই ইঞ্জিনিয়র চন্দন রাই দাবি করেন, “অবৈধ সাব মার্সিবেল পাম্প বসানোর পিছনে এই দফতরের কোনও কর্মী জড়িত নন। হুকিং করে অবৈধ ভাবে ওই পাম্প বসানোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে।” তবে তপন ব্লকে বিদ্যুত্‌ দফতর থেকে কত সংখ্যক সাবমার্সিবেল পাম্পে সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব অবশ্য বলতে চাননি চন্দনবাবু। তিনি বলেন, “ওই ভাবে সংখ্যাটা বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

বিদ্যুত্‌ বণ্টন কোম্পানির বিভাগীয় সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সুজিত সাহা জানান, তপনের সাব স্টেশনে সম্প্রতি প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে একটি ট্রান্সফর্মার বসিয়ে ভোল্টেজ বাড়ানো হতে রাতারাতি ফের অবৈধ ভাবে পাম্প বসে যাওয়ায় লো-ভল্টেজ হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে শীঘ্র অভিযান শুরু করব। বাখরপুর এলাকার চাষি মতিবুল রহমান বলেন, “কিসান ক্রেডিট কার্ডে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১২ বিঘায় বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। সাবমার্সিবেল পাম্পের জল কিনে শুরুতে সেচ দিচ্ছিলাম। কিন্তু দু’দিন পর আর পাম্প থেকে জল ওঠে না। পুকুর ও জলাশয়ও শুকিয়ে কাঠ। জমিতে সেচ দিতে না পেরে অর্ধেক জমির বোরো ধান মরে গিয়েছে। ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করব কী ভাবে বুঝতে পারছি না।” বাখরপুর, লক্ষীনারায়ণপুর, কুড়াহার, বাটুরিয়া, ছত্রহাটি, ঘাটিকা, নাহিরকুড়ি, বেতলি, শিসরাইল, শালগাঁর মত অন্তত ৩২টি গ্রামের চাষিদের একই অবস্থা। বাটুরিয়া গ্রামের চাষি খলিলউদ্দিন সরকার বলেন, “কিসান ক্রেডিট কার্ডে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল বোরো ধান লাগিয়েছি। ৬ বিঘার ধান সেচের অভাবে মরে গিয়েছে।” ছোটচাষিদের আরও করুণ। এলাকার জীবন মণ্ডল, রবুরু বর্মনেরা জানান, ২-৫ বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি। জলাভাবে ধান লাল হয়ে গিয়েছে। কৃষক মতিবুল সাহেব বলেন, “প্রশাসন পাশে না দাঁড়ালে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন