শিলিগুড়িতে কর্মবিরতি করবেন আইনজীবীরা

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আরও তীব্র হচ্ছে সংঘাত

ভক্তিনগর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ফের আদালতের ‘এলাকা’ নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধেছে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে। ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি আদালতের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে আগামী সোমবার থেকে টানা কর্মবিরতি শুরুর কথা জানিয়েছে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে আবেদনও করেছে বার অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

ভক্তিনগর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ফের আদালতের ‘এলাকা’ নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধেছে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে। ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি আদালতের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে আগামী সোমবার থেকে টানা কর্মবিরতি শুরুর কথা জানিয়েছে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে আবেদনও করেছে বার অ্যাসোসিয়েশন। একই ভাবে ভক্তিনগর থানার ১৪৪ ধারা সংক্রান্ত যে মামলাগুলি শিলিগুড়ি কমিশনারেটে পাঠানো হয়, সেগুলিও জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের কাছে পাঠানোর দাবি তুলেছে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

আগামী সোমবার থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের ১১টি কোর্টে কর্মবিরতি পালন করবে আইনজীবীরা। শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে দার্জিলিং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জোনাল জজ বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিলিগুড়ি আদালতে আসার কথা রয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের নতুন ভবন তৈরি, ভক্তিনগর থানা সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। তিনি না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে বার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে আগামী ১৭ ডিসেম্বর ফের আলোচনায় বসবে বার অ্যাসোসিয়েশন।

শিলিগুড়ির আইনজীবীদের দাবি, মহকুমা আদালতের নতুন ভবন তৈরির দাবিতে গত ২ ডিসেম্বর বার অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি আদালতের অর্ন্তভুক্তির দাবিকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরেও, শিলিগুড়িতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চালু না হওয়ার কারণেই ভক্তিনগর থানাকে অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি।

Advertisement

২০১২ সালের অগস্ট মাসে জলপাইগুড়ি জেলার ভক্তিনগর থানাকে নিয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট গঠন করা হয়। সে সময় জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন নামে। যার জেরে ভক্তিনগর কমিশনারেটে থাকলেও, জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের এক্তিয়ারেই থাকে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি এই থানার মামলাগুলি শিলিগুড়ি আদালতে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়। যদিও, গত বুধবার জলপাইগুড়ির সরকারি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী, ভক্তিনগরকে জলপাইগুড়ি জেলা আদাতের অর্ন্তভুক্ত রাখার কথা ঘোষণা করেন।

শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন দে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় শিলিগুড়ির আইনজীবীরা ‘মর্মাহত’। তার দাবি, “মেট্রোপলিটন আদালত চালু না হওয়া পর্যন্ত, ভক্তিনগরের বাসিন্দাদের কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্ত হয়ে কোনও লাভ হবে না। তাঁদের বিচারের জন্য জলপাইগুড়ি আদালতে যাওয়ার দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে। সে কারণেই বাসিন্দাদের স্বার্থে আগামী সোমবার থেকে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি শুরু করবে।

মেট্রোপলিটন আদালত তৈরি না হলে, কমিশনারেটের কোনও যৌক্তিকতা থাকে না বলেও শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি করা হয়েছে। তাদের যুক্তি যে কোনও এলাকায় কমিশনারেট তৈরি করতে হলে, মেট্রোপলিটন আদালত বা সিটি আদালত গঠন করা বাধ্যতামুলক। যদিও শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট গঠনের দু’বছর পরেও সে নিয়ম মানা না হয়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা আইনগত জটিলতা তৈরি করবে বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন। শিলিগুড়ির এক আইনজীবীর কটাক্ষ, “কমিশনারেট গঠনের পরে শুধু পুলিশের উর্দির রং বদল ছাড়া অন্য কোনও পরিবর্তন হয়নি।”

অন্যদিকে, ভক্তিনগরকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের সঙ্গে রাখার ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শহর জুড়ে ফ্লেক্স লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরী শিলিগুড়ির আন্দোলন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রচার শুরু করছি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ভক্তিনগর থানা নিয়ে আর কোনও দ্বিমত নেই।”

তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে উৎসাহিত জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন ১৪৪ ধারা সংক্রান্ত মামলাও শিলিগুড়ি কমিশনারেট থেকে জলপাইগুড়িতে সরিয়ে আনার দাবিতে সরব হয়েছেন। উত্তরবঙ্গের এক আইনজীবীর মন্তব্য, “বিষয়টি হাইকোর্টের উপরে ছেড়ে না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করাতে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন