মুখ্যমন্ত্রীর শেরপা বোর্ড ঘোষণায় ফুঁসছে মোর্চা

তামাঙ্গ এবং লেপচা জনজাতির জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে বিতর্ক ছড়িয়ে ছিলেন আগেই। তোপ দেগে মোর্চার ঘোষণা ছিল, পাহাড়ে ‘বিভাজনের বীজ’ ছড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন ঘটল ‘শেরপা সাংস্কৃতিক বোর্ড’। যা শুনে, শুক্রবার মোর্চা নেতৃত্বের অভিমান, ‘জিটিএ-র আর প্রয়োজন কোথায়, ভেঙে দিলেই হয়!’

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও রেজা প্রধান

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫০
Share:

দার্জিলিং ম্যালে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তামাঙ্গ এবং লেপচা জনজাতির জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করে বিতর্ক ছড়িয়ে ছিলেন আগেই। তোপ দেগে মোর্চার ঘোষণা ছিল, পাহাড়ে ‘বিভাজনের বীজ’ ছড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন ঘটল ‘শেরপা সাংস্কৃতিক বোর্ড’।

যা শুনে, শুক্রবার মোর্চা নেতৃত্বের অভিমান, ‘জিটিএ-র আর প্রয়োজন কোথায়, ভেঙে দিলেই হয়!’

Advertisement

এ দিন দার্জিলেঙে তাঁর সভা থেকে শেরপাদের জন্য সাংস্কৃতিক বোর্ড গঠনের ঘোষণার পরেই মোর্চা-সহ পাহাড়ের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই প্রশ্ন তুলেছে, পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আলাদা করে বোর্ড গড়ে দেওয়া হলে জিটিএ-র কার্যকারিতা আর রইল কোথায়? বিকেলে তারই জেরে শহরের ম্যালে জিটিএ সমর্থকেরা এক জোট হয়ে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের সেই ক্ষোভের ভাষা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘জিটিএ বাতিল করে পাহাড়ের সব সম্প্রদায়কে বোর্ড করে দিক রাজ্য সরকার। জিটিএ-র আর প্রয়োজন কোথায়!’

পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। উত্তেজিত জনতাকে আশ্বস্ত করে রোশন বলেন, “হতাশ হবেন না। সব সম্প্রদায়ের জন্য রাজ্য সরকার বোর্ড তৈরি করে দিক। তারা তাদের মতো কাজ করুক। তবে, মনে রাখবেন, এ ভাবে মোর্চাকে দুর্বল করা যাবে না।” পরে নেতাদের নিয়ে ভানু ভবনে বৈঠকে বসেন রোশন। বৈঠকের পরে মোর্চার তরফে জানানো হয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য যে সব বোর্ড গড়া হয়েছে সেগুলি জিটিএ-এর আওতাতেই রাখতে হবে। এ ব্যাপারে ২৯ তারিখ দিল্লিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে। সেখানেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জিটিএ-র ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগও জানানো হবে বলে মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে।

ম্যালের মঞ্চে।

শুক্রবার, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দার্জিলিঙের ম্যালে সরকারি মঞ্চ থেকে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, “শেরপা কালচারাল বোর্ড গড়ে দেওয়া হল।” পরিচিত ঢঙে মঞ্চের এ মাথা ও মাথা ঘুরে কর্ডলেস মাইক হাতে মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “শেরপাদের তরফে আমার কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বোর্ডকে প্রাথমিক ভাবে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে। সেই টাকা দিয়ে দুঃস্থ শেরপাদের বাড়ি তৈরি করবে বোর্ড।”

এখােই শেষ নয়, মঞ্চে দশ জন প্রবীণ শেরপাকে এক লক্ষ টাকার চেক দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় উপস্থিত মোর্চা নেতারা বুঝে ওঠার আগেই সরকারি আধিকারিক আর শেরপা গোষ্ঠীর মানুষজন হাততালি দিতে থাকেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মোর্চা নেতৃত্বের অনেককেই পাল্টা ক্ষোভ দেখাতেও দেখা যায়। এই ডামাডোল থিতিয়ে আসার আগেই সভা ভেঙে যায়। মঞ্চ থেকে নেমে যান মুখ্যমন্ত্রী।

দু’বছর আগে, ২০১৩’র ফেব্রুয়ারি মাসে লেপচা বোর্ড গঠনের পরে সরকারের ‘বিভাজনের রাজনীতির’ প্রতিবাদে পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল মোর্চা। গত বছরের ২১ জানুয়ারি তামাঙ্গ বোর্ড গঠনের পরেও একই অভিযোগ তুলেছিল মোর্চা। তাদের দাবি ছিল, লোকসভা ভোটের সময় পাহাড়ে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে লেপচা বোর্ডের নেতা-কর্মীদের ‘হাত’ করতেই তৃণমূল সরকারের এই চাল। অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল না। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার সভায় লেপচা এবং তামাঙ্গ বোর্ডের সদস্যদেরও দেখা গিয়েছিল। মোর্চার অভিযোগ ছিল, তাদের শক্তি খর্ব করতে পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ গড়ে তুলছে রাজ্য সরকার। মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের রাস্তা এড়িয়েই চলছিলেন মোর্চা নেতারা।

এ দিন শেরপা বোর্ড গঠনের পরে সেই সৌহার্দ্য কী থাকবে, পাহাড়ে এখন ধাক্কা খাচ্ছে এ প্রশ্নই।

ছবি: রবিন রাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন