কোথাও বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে, আবার কোথাও তা টপকে মঞ্চের দিয়ে ধেয়ে আসা জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হল পুলিশকে, তৃণমূল কর্মীদেরও। শেষে মাইকে ধমক দিয়ে, ডায়লগ বলে, আবদার মেনে ছবি তুলতে দিয়ে পরিস্থিতি সামলালেন মিঠুন। বৃহস্পতিবার দুই দিনাজপুরের মিঠুন চক্রবর্তীর সভাকে ঘিরে এমনই ঘটনাগুলি ঘটল। প্রশ্ন উঠল পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েও। মিঠুনের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রও।
পুলিশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস পাল। তিনি বলেন, “বাঁশের ব্যারিকেড ভাঙার সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীর সংখ্যা এতটাই কম ছিলেন যে তাঁরা সরে যেতে বাধ্য হন। দলের স্বেচ্ছাসেবকেরা চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি দেখে সভায় উপস্থিত পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র ভাষণ না দিয়ে মাইক্রোফোন মিঠুনের হাতে তুলে দেন।” পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার এসসালভে মুরাগন বলেন, “প্রয়োজনীয় পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। অন্তত ১৫০ জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল।”
(উপরে) হরিরামপুর ও (নীচে) হেমতাবাদের সভা। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন দুপুরে মালদহ থেকে হেলিকপ্টারে চেপে মিঠুন-মদনবাবুর হরিরামপুর হাইস্কুলের ফুটবল মাঠের জনসভায় আসার কথা ছিল। দুপুর ১২টা বাজতে সভার মাঠ ও গ্যালারি ভরে যায়। হেলিপ্যাডে নামার সিগন্যাল ঠিকমত বুঝতে না পেরে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর খেতে থাকে। চড়া রোদের মধ্যে মাঠে প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক বসে থাকার পর সভাস্থলে মিঠুন পৌঁছাতেই পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। জনতার চাপে বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে ঢেউয়ের মতো মানুষের ঢল মঞ্চের দিকে ধেয়ে আসে। মিঠুনকে বলতে হয়, “বসো, না হলে কিছু বলব না। অনেক দূর থেকে এসেছি চলে যাব। আমি অনেক লম্বা, দেখতে পাবেন বসে পড়ুন? মঞ্চের পাশে জনতাকে ধমক দিয়ে বলেন, দাঁড়ালে বার করে দেব।” তার পরে তিনি মঞ্চের চারিদকে ঘুরে ঘুরে বাসিন্দাদের ছবি তোলার অনুরোধ মেটান। শেষে তাঁর সিনেমার ডায়লগ বলে বাসিন্দাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বালুরঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে তিনি বাসিন্দাদের ভোটও দিতে বলেন।
একই ছবি ছিল রায়গঞ্জে। এদিন তৃণমূল প্রার্থী পবিত্ররঞ্জন দাশমুন্সির সমর্থনে হেমতাবাদ থানা মাঠে একটি জনসভায় যোগ দেন মিঠুন। বিকেল চারটা নাগাদ দু’জনে সভাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের হেমতাবাদ হাইস্কুল মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন। মিঠুন মঞ্চে উঠতেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়।
শতাধিক উৎসাহী বাসিন্দা পুলিশকর্মী ও সিভিক পুলিশের কর্মীদের ধাক্কা মেরে মঞ্চের সামনের বাঁশের ব্যারিকেড টপকে মঞ্চের সামনে ভিড় করেন। মিঠুন মঞ্চ থেকে মাইক্রোফোনে জনতাকে বারবার শান্ত হওয়ার অনুরোধও করেন। এরপর মিঠুন মঞ্চের উপর থেকেই বাসিন্দাদের ছবি তোলার সুযোগ দিলে তাঁরা বসেন। কেউ যাতে মঞ্চে উঠতে না পারে তারজন্য তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা মঞ্চটি চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন। পুলিশ চেষ্টা করেও তাঁদের নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রাখতে পারেনি। একটু বিশৃঙ্খলা হয়েছে ঠিকই।”
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জেলার কিছু এলাকা দার্জিলিং লোকসভার অধীনে হওয়ায় ভোট ছিল। জেলার কয়েকটি এলাকায় অধীর চৌধুরীর জনসভা ছিল। সেইকারণে, পুলিশ কর্মীর অভাব থাকায় মিঠুন চক্রবর্তীর সভায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা যায়নি। সাময়িক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। তবে নির্বিঘ্নেই সভা শেষ হয়েছে।”