মাথায় লালবাতি, গাড়িতে ২৮৮ কেজি গাঁজা

মালবাজারের চালসা এলাকায় জাতীয় সড়ক ধরে তীব্রগতিতে চলছিল লালবাতি লাগানো গাড়িটি। পথে নানা জায়গায় অন্য গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা হলেও সেটি থামায়নি পুলিশ। আচমকা চালসা মোড়ের কাছে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হল গাড়িটি। সোমবার সকাল ৮ টার ঘটনা। দুর্ঘটনার পরে ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হল সারি সারি গাঁজার প্যাকেট। জনতা তাড়া করে গাড়ির চালক ও আরোহীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলেও দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

এই গাড়ি থেকেই মেলে গাঁজা। সেই প্যাকেট নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

মালবাজারের চালসা এলাকায় জাতীয় সড়ক ধরে তীব্রগতিতে চলছিল লালবাতি লাগানো গাড়িটি। পথে নানা জায়গায় অন্য গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা হলেও সেটি থামায়নি পুলিশ। আচমকা চালসা মোড়ের কাছে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হল গাড়িটি। সোমবার সকাল ৮ টার ঘটনা। দুর্ঘটনার পরে ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হল সারি সারি গাঁজার প্যাকেট। জনতা তাড়া করে গাড়ির চালক ও আরোহীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলেও দিয়েছে। মালবজারের এসডিপিও নিমা সেরিং ভুটিয়া বলেন, “ধৃতরা জেরায় কবুল করেছে, অসম থেকে বারাসাতে গাঁজা পৌঁছতে যাচ্ছিল। ধৃতদের ২ জনের বাড়ি বারাসাতে। গাড়িটির মালিক অসম কিংবা বারাসাতের বলে মনে হচ্ছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশের সন্দেহ, অসমের নলগাঁও থেকে গাঁজা নিয়ে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও পাচার হচ্ছিল।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল?

সকাল তখন ৮টা। চালসা মোড়ের কাছে মোটামুটি ভিড়। সেই সময়ে সকলে দেখেন, অসমের নম্বর প্লেট লাগানো গাড়িটি লালবাতি জ্বালিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে আসছে চালসা মোড়ের দিকে। কালো রঙের সাফারি গাড়িতে ভিআইপি আছে ভেবে সমীহ করে অন্য সব গাড়ি পথ ছেড়ে দিচ্ছিল। কিন্তু, একটা মোড়ের কাছে উল্টোদিক থেকে আসা ট্রাকের একেবারে মুখোমুখি হয়ে পড়ে সাফারিটি। শেষ মুহূর্তে দুপক্ষ ব্রেক কষলেও ছোট গাড়ির সামনের দুটি চাকাই কিছুটা দুমড়ে যায়। ‘ভিআইপি’ কারও আঘাত লেগেছে ভেবে আশেপাশের লোকজন উদ্ধার করতে এগোতেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত সাফারি চলতে শুরু করে। বেঁকে যাওয়া চাকা নিয়ে কিছুটা এগোনোর পরে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় সেটির। মুহূর্তের মধ্যে সাফারির চালক ও সহকারী নেমে লাগোয়া দক্ষিণ আইভিল চা বাগানে ঢুকে ছুটতে থাকেন। তখনই এলাকার লোকজন তাড়া করে দুজনকে ধরে ফেলেন। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে খবর যায়। পুলিশ পৌঁছে ছোট গাড়ির চালক ও তাঁর সহকারীকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

ওই ঘটনা দেখেছেন চালসা গোলাইয়ের ছোট গাড়ির চালক প্রভু বিশ্বকর্মা। তিনি বলেন, “লালবাতি জ্বালানো গাড়ি দুর্ঘটনা করল দেখে সকলে চিন্তায় পড়ে যাই। ভিআইপি কারও কোনও আঘাত লেগেছে ভেবে ছুটে যাই। কিন্তু, সেই গাড়িই যে ফের এই অবস্থায় চলতে শুরু করবে তা ভাবিনি। তখন ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকে।” চালসার আরেক বাসিন্দা সইদুল ইসলামও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সইদুল বলেন, “রোজই কত লালবাতির গাড়ি প্রতিদিন চালসা হয়ে চলে যায়। সন্দেহের বদলে আমরা উল্টে সমীহই করি। কিন্তু লালবাতির গাড়ি মানেই যে ভিআইপি নয় সেটা এবার স্পষ্ট হল।”

পুলিশ জানায়, ধৃত বিশ্বনাথ ওঁরাও ও বন্ধন ওঁরাও দু’জনেরই বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। তাদের বাড়ি বারাসাতের মধ্যমগ্রামে। গাড়িটিতে অসমের নম্বর প্লেট ঝোলানো থাকলেও গাড়ির ভেতরে সামনের সিটের নিচ থেকে পশ্চিমবঙ্গের একজোড়া নম্বর প্লেটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গাড়িটি থেকে ২৭ প্যাকেট গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। কালো প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো প্যাকেটগুলির ওজন ৫ কেজি থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত রয়েছে। ২৮৮কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়। যার বাজার মূল্য ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি বলে পুলিশের অনুমান। ঘটনাস্থলে যান মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতিও। তাঁর সামনেই এসডিপিও গাঁজা ওজন করান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন