শিলিগুড়ি হিন্দি হাইস্কুল

মাধ্যমিকের টেস্টের ফল জানানো হয়নি, শিক্ষকদের আটক দু’ঘণ্টা

ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল না-জানানোর অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীদের তালা বন্ধ করে প্রায় দু’ ঘন্টা আটকে রাখলেন ছাত্ররা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলে এই ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল না-জানানোর অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীদের তালা বন্ধ করে প্রায় দু’ ঘন্টা আটকে রাখলেন ছাত্ররা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি হিন্দি হাই স্কুলে এই ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষাকর্মীদের একাংশের গোলমালের জেরে টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল লেখা এবং স্কুলের সিল মোহর দেওয়া নথির একাংশ ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

পরিস্থিতির কথা জানিয়ে পুলিশকে ফোন করেন শিক্ষকেরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা ১২ টা নাগাদ তালা খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষক, শিক্ষিকা, এবং শিক্ষা কর্মীরা আটকে থাকা ঘর থেকে বার হন। ছাত্রদের অভিযোগ, স্কুলের কর্মী প্রদীপ ঠাকুর ফলাফল লেখা নথি ছিঁড়ে দিয়েছেন। তিনিই ছাত্রদের কাছ থেকে বোর্ডের পরীক্ষা ফি ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ২৮৫ টাকা চাইছেন। ওই ফি দিতে অস্বীকার করলে নথি ছেঁড়া হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে গোলমাল বাঁধছে দেখে পুলিশ প্রদীপবাবুকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়। স্কুলের সমস্যা নিয়ে আগামী কাল বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

শিলিগুড়ি থানার পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি ওই সমস্ত নথি ছিঁড়ে গোলমাল উস্কে দিচ্ছিলেন সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রদীপ ঠাকুরের অভিযোগ, ছাত্র এবং অভিভাবকদের কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরে ওই কাগজ ছিঁড়তে বলে চাপ দেন। প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে স্কুলের ছাত্র এবং অভিভাকদের কয়েকজন পরে পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছেন।

Advertisement

স্কুলটি যে ট্রাস্টের অধীনে বলে দাবি করা হয় তার সদস্য সীতারাম ডালমিয়া বলেন, “স্কুলের ছাত্রদের কাছ থেকে বোর্ডের ফি ১৮৫ টাকা এবং স্কুলের পরীক্ষা ফি ১০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। তা না দেওয়া হলে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের ফর্ম ভর্তি করতে দেওয়া হবে না বলে স্কুল পরিদর্শক, প্রশাসনের কর্তাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ, বুধবার ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন।” তাঁর অভিযোগ, “ছাত্ররা ফি দিতে চাইলেও অভিভাবক মঞ্চের লোকজন তাদের দিতে দিচ্ছে না। তারা পিছন থেকে উস্কে দিচ্ছে। বোর্ডের ফি যেমন ছাত্রদের দিতে হবে, তেমনই স্কুলের পরীক্ষার ফি’ও দিতে হবে।” তিনি জানান, দিন কয়েক আগেও এ ব্যাপারে সমস্যা তৈরি করা হয়। পুলিশকে তা জানানো হয়েছিল। এ দিনের ঘটনার বিষয়টিও পুলিশকে তাঁরা জানান।

ছাত্রদের অভিযোগ, মাধ্যমিকের টেস্টের পর ১৬৬ জন ছাত্রের মধ্যে ৬১ জনের ফলাফল জানানো হয়েছে। কেন না তাঁরা নতুন ক্লাসে ভর্তির সময় স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি মতো ২৩৩৫ টাকা করে ফি জমা দিয়েছে। তার মধ্যে স্কুলের পরীক্ষা ফি ধরা রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই টাকা নিতে পারে না। সরকারি নিয়ম মেনে ২৪০ টাকা ভর্তি ফি দেওয়ার দাবি ওঠে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাকি ছাত্ররা ২৪০ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছে। ওই সমস্ত ছাত্রদের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। তাদের মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ফর্ম ফিলাপ করতেও দেওয়া হয়নি। ছাত্রদের অভিযোগ, সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের তরফে গত ৩০ নভেম্বর বৈঠক ডাকা হবে বলে জানানো হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ছাত্র প্রতিনিধিদের তা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠক না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। ফলাফল জানানোর দাবিতে নিরুপায় হয়ে তারা এ দিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘরে আটকে রেখেছি। অন্তত ২০ জন শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের একটি ঘরে এবং ৫ জন কর্মীকে অপর একটি ঘরে তালা বন্ধ করে রাখেন ছাত্ররা।

সমস্যা মেটাতে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্র এবং অভিভাবক মঞ্চের সদস্যদের একাংশ। অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, “সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের তরফে অবিলম্বে বৈঠক করা না হলে সমস্যা বাড়বে। স্কুলে বর্তমানে কোনও প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কেউ নেই। কর্মচারীদের দিয়ে স্কুল চালাতে চাইছেন একটি ট্রাস্টের কর্মকর্তারা। এ ভাবে চলতে পারে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন