মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনেও ঝুঁকির যাত্রা

প্রত্যন্ত এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বাস চালানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য টোটো-অটোই ছিল ভরসা। সোমবার কোচবিহারে দুর্ঘটনার চার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ পাঁচজনের মৃত্যুর পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি বলে অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৫
Share:

প্রত্যন্ত এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বাস চালানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু মাধ্যমিকের দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য টোটো-অটোই ছিল ভরসা। সোমবার কোচবিহারে দুর্ঘটনার চার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ পাঁচজনের মৃত্যুর পরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি বলে অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ।

Advertisement

জেলাশাসক তাপস চৌধুরী অবশ্য বলেন, “বালুরঘাট-মালদহ ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে সবমিলিয়ে ৭১টি বাস চলছে। ফলে কোনও সমস্যা নেই। তবে তপন এলাকায় কিছু সমস্যা ছিল। ওই রুটে একাধিক মিনিক্যাব দেওয়া হয়েছে।” জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) লরেন্স সিদলিম এ দিন বলেন, “দূরবর্তী এলাকার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সকাল থেকে অতিরিক্ত সরকারি যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় নেমেছে।”যদিও অভিভাবকদের দাবি প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনও মিল নেই।

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, বালুরঘাট ডিপো থেকে মালদহ-বালুরঘাট রুটে মোট ৯টি বাস চলছে। পাশের জেলাগুলি থেকে অনান্যদিনের মতোই বেসরকারি বাস চলেছে বলে জানান বালুরঘাট বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধি অশোক চৌধুরী। সিটু অনুমোদিত এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত বলেন, “চাহিদার তুলনায় এদিন বাস কম ছিল। কোচবিহারের ঘটনা থেকে এখনই সতর্ক না হলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে।” যদিও তৃণমূলের আইএনটিটিইউসির বালুরঘাট ডিপের সম্পাদক গোপাল সাহার দাবি, “বালুরঘাট-মালদহ রুটে সকাল থেকে ১০ মিনিট অন্তর নিগমের বাস চলেছে। পরীক্ষার জন্যও বিশেষ বাস চালানো হচ্ছে।”

Advertisement

তবে তপনে মঙ্গলবারের ছবিটা ছিল সোমবারের মতোই। তপন ব্লকের বালাপুর হাইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভরসা ছিল সেই ছোট গাড়িই। এদিন সকালে তপন থেকে বালুরঘাট হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলাচল করে বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে সাত-আট জন মিলে এক একটি ছোটগাড়ি ভাড়া করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছয়। বালাপুর এলাকার বাসিন্দা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুমিত্রা বর্মন, ঝর্ণা ওঁরাওদের কথায়, “গ্রাম থেকে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও সরকারি-বেসরকারি কোনও বাসের দেখা না পেয়ে চড়া ভাড়া দিয়ে ছোটগাড়িতে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে।”

বালুরঘাটের বোয়ালদার গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার খাসপুরের বাসিন্দা আশিস ওঁরাও, মানিক রায়, শুভঙ্কর দাসদের মতো পরীক্ষার্থীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে টোটোতে চেপে শহরের থানামোড় এলাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছয়। তাঁদের অভিযোগ, মূল রাস্তা থেকে গ্রামের দিকে যাওয়ার কোনও বাস মিনিবাস তো নেই, ম্যাক্সি গাড়ির দেখাও মেলে নি। খাসপুর থেকে বালুরঘাট শহর মাত্র ৫ কিলোমিটার। এই দূরত্ব আসতে ৪০০ টাকা টোটো ভাড়া দিতে হয়েছে তাদের। কুমারগঞ্জের বটুন থেকে জাকিরপুর কিংবা হরিরামপুর ব্লকের গোকর্ণ, সৈয়দপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকার পরীক্ষার্থীদের সদর হরিরামপুরের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতেও ভ্যানোই ছিল ভরসা। গাদাগাদি করে ঝুঁকির যাত্রা হলেও বিকল্প উপায় পরীক্ষার্থীদের ছিল না বলেই অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন