দার্জিলিং ম্যালে বসেই ল্যাপটপে বুঁদ এক বিদেশী পর্যটক। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন রবিন রাই।
টাট্টু ঘোড়ায় চেপে ম্যালে দু’পাক ঘুরেছেন। সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে দিয়ে সে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দিও করেছেন। অথচ, ফেসবুক-ট্যুইটারে সেই ছবি ‘আপলোড’ করতে গিয়ে দেখলেন মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগ কাজ করছে না। ছুটির ফাঁকে টুক করে মেল চেক করতে গিয়ে নেটওয়ার্ক খুঁজেই পাচ্ছে না ল্যাপটপে লাগানো ‘ডঙ্গল’টাও। এই ঝক্কি আর পোহাতে হবে না দার্জিলিঙে। এ বার দার্জিলিঙের চৌরাস্তা ও ম্যালকে ‘ওয়াই-ফাই’ পরিষেবার আওতায় আনল জিটিএ। এর সুবাদে ম্যালে বসেই নিখরচায় দ্রুতগতির নেট-রাজ্যে ঢুকে পড়তে পারবেন পর্যটক থেকে পাহাড়ের বাসিন্দা, সকলেই।
চলতি মাসের শুরু থেকেই পরীক্ষামূলক ভাবে ওয়াই-ফাই পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে ম্যাল এবং চৌরাস্তায়। জিটিএ-এর পর্যটন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অধিকর্তা সোনাম ভূটিয়া বলেন, “ওয়াই-ফাই পরিষেবার এলাকায় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ-সহ অন্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যাবে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা, বিমানে আসন সংরক্ষণের মতো পরিষেবা পেতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের গতিও বেশি রাখা হয়েছে।”
তারহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা মেলে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তিতে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে পড়া যায় নেট-দুনিয়ায়। চৌরাস্তা এবং ম্যালের ২৫০ বর্গফুট এলাকাকে ‘ওয়াই-ফাই জোন’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই এলাকায় ঢুকলেই ওয়াই-ফাইয়ের প্রযুক্তি আছে এমন যে কোনও মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে চব্বিশ ঘণ্টাই বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেওয়া হবে বলে জিটিএ সূত্রে জানানো হয়েছে।
ম্যাল বা চৌরাস্তায় বসে মোবাইল বা ল্যাপটপে ওয়াই-ফাই চালু করে ‘সার্চ’ করলেই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে ‘ফ্রি ওয়াই-ফাই’ এবং ‘ফ্রি ওয়াই-ফাই ২’ লেখা দু’টি ‘অপশন’। তার যে কোনও একটি বেছে নিলেই ঢুকে পড়া যাবে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। তাও পুরোপুরি নিখরচায়। নিখরচায় ইন্টারনেটের সংযোগ দার্জিলিঙের প্রতি আকর্ষণে বাড়তি মাত্রা এনে দেবে বলে জিটিএ-এর আধিকারিকদের মতোই টু্যর অপারেটররাও আশা করছেন। তরুণ প্রজন্ম এই পরিষেবাকে লুফে নেবে বলে তাঁদের আশা।
এর আগে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, আমদাবাদ, পটনার পর্যটনকেন্দ্রে ওয়াই-ফাই চালু হয়েছে। এ বার এই তালিকায় নাম জুড়েল দার্জিলিঙেরও। ম্যালে এ মাসের শুরু থেকে এই পরিষেবার ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়েছে। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই পুরোপুরিভাবে পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। তবে পরিষেবা চালু হওয়ার পরেও ভাল সাড়া মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন এই পরিষেবা ব্যবহার করছেন বলে জিটিএ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। কলকাতা থেকে ঘুরতে আসা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ম্যালে বসে আড্ডা দিয়ে ছবি তুলছি। আর সেখানে বসেই নিখরচায় ছবি আপলোড করে দিচ্ছি। প্রয়োজন মতো ফেরার টিকিটও কাটতে পারছি ম্যালের বেঞ্চে বসেই। এবং সম্পূর্ণ নিখরচায়। এর থেকে ভাল কিছু হয় নাকি!”
পর্যটকদের কথা মাথায় রেখেই এই পরিষেবা বলে জিটিএ জানালেও, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ মেলায় বেজায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসিম হোসেন বলেন, “চৌরাস্তায় আমার দোকান যেখান রয়েছে, সেখানে কোনও সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবাই মেলে না। এ বার ওয়াই-ফাইয়ের সৌজন্যে আমিও পরিষেবা পাব।”