মালদহে মান রক্ষা গনি মিথে

‘মোদী ঝড় বা দিদি ঝড়’ কোনওটাই টলাতে পারল না মালদহের ‘গনি-মিথ’কে। রেকর্ড ভোটে গনি পরিবারের দুই সদস্য জিতলেন। মালদহের বড় অংশের মানুষ ফের প্রমাণ করলেন তাঁরা কোতোয়ালির পাশেই আছেন। পাঁচ দিন ধরে মালদহে ঘাঁটি গেড়ে দলের দুই প্রার্থীকে জেতাতে জোর প্রচারও করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনিও ভাঙতে পারলেন না বরকত গনি খানের নামের প্রভাবকে, এ কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরাও।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:০২
Share:

জয়ের পরে। (উপরে) আবু হাসেম ও (নীচে) মৌসম। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় ও বাপি মজুমদার।

‘মোদী ঝড় বা দিদি ঝড়’ কোনওটাই টলাতে পারল না মালদহের ‘গনি-মিথ’কে। রেকর্ড ভোটে গনি পরিবারের দুই সদস্য জিতলেন। মালদহের বড় অংশের মানুষ ফের প্রমাণ করলেন তাঁরা কোতোয়ালির পাশেই আছেন। পাঁচ দিন ধরে মালদহে ঘাঁটি গেড়ে দলের দুই প্রার্থীকে জেতাতে জোর প্রচারও করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনিও ভাঙতে পারলেন না বরকত গনি খানের নামের প্রভাবকে, এ কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরাও।

Advertisement

তৃণমূলের জেতা তো দূরের কথা, দক্ষিণ মালদহে দলের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন চতুর্থ স্থানে এবং উত্তর মালদহে প্রার্থী সৌমিত্র রায় তৃতীয় স্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন। গনিখান চৌধুরীর ভিত টলাতে গিয়ে মোদীর ঝড়ে উল্টে জেলার দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের ‘ঘাঁটি’ ভেঙে গিয়েছে। নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় ধরে রাখতে পারেননি দুই মন্ত্রী। গত লোকসভায় বিজেপি দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রে ভোট পেয়েছিল ৪৫ হাজারের কিছু বেশি ও উত্তর মালদহ প্রায় ৬০ হাজার। এ বার সেখানে দক্ষিণ মালদহে বিজেপি ২ লক্ষের উপরে এবং উত্তর মালদহে ১ লক্ষ ৭০ হাজারের মতো ভোট পেয়েছে।

বিকালে জেতার পরে দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল নেতানেত্রীরা হুমকি দিয়েছিল, কোতোয়ালিতে তালা মেরে দেবেন। গনি মিথ ভেঙে ফেলবেন। এটা মালদহের মানুষ মেনে নিতে পারেননি। মালদহের মানুষ তাই জেলার দুটি আসনেই কংগ্রেসকে জিতিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। মালদহ জেলা গনিখান চৌধুরীকে বাদ দিয়ে কোনও কাজ হয় না। হবেও না।” আর দলের উত্তর মালদহের জয়ী প্রার্থী মৌসন বেনজির নূর বলেন, “গনিখান চৌধুরীর অসম্পূর্ণ কাজ আমরা করেছি। আগামী দিনেও করব। তাই মালদহের মানুষ আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন।”

Advertisement

গনি মিথের কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন দক্ষিণ মালদহের সিপিএমের প্রার্থী আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেন, “আট বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন গনিখান। কিন্তু এখনও মালদহ থেকে তাঁর প্রভাব মুছে যায়নি। মালদহ কংগ্রেস তথা গনিখানের ঘাঁটি। তা এবারও আমরা ভাঙতে পারলাম না।”

জেলা তৃণমূল চূড়ান্ত হারের পর শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালাও। হারের পরে দক্ষিণ মালদহ কেন্দ্রের তৃণমূলের মোয়াজ্জেম হোসেন সরাসরি দলের একাংশের দিকেই আঙুল তুলেছেন। পলিটেকনিক কলেজ ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “গনি মিথ বলে কিছু নেই। দলের একাংশ আমার হয়ে কাজ করেনি। আমি জিতলে তাঁদের প্রভাব কমে যেতে পারে, তা অনেকেই চাননি। কংগ্রেসের সঙ্গে একাংশ আঁতাত করেছিল। দলনেত্রীকে সব জানাব।” একই কথা বলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী দেবী। তিনি বলেন, “দলে অন্তর্ঘাত হয়েছে। আমাদের দলের কিছু নেতা কর্মী কংগ্রেসের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। তাদের তালিকা তৈরি করে রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠাচ্ছি।”

জেলার আর এক মন্ত্রী অবশ্য জেলা নেতৃত্বের দিকেই সোজাসুজি আঙুল তুলেছেন। পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “জেলা নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও সাম্প্রদায়িক ভোটের কারণে আমরা দুটি কেন্দ্রেই হেরেছি। দক্ষিণ মালদহের প্রার্থীকে মানুষ একেবারেই পছন্দ করেননি। আমাকেও ঠিক মত কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমাকে উত্তর মালদহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমিও নেতৃত্বকে সব জানাব।” তিনি জানান, শুধু ইংরেজবাজার বিধানসভা নয়, ইংরেজবাজার পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের জেলা তৃণমূলের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে।”

ঘটনা হল, উপনির্বাচনে ইংরেজবাজার বিধানসভা থেকে পযর্টনমন্ত্রী ২০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। সেই ইংরেজবাজার বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ ঘোষ ৭৪,০৪৩টি ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল ৩৭,৩৩২টি। একই ভাবে মানিকচকে সাবিত্রী দেবীর বিধানসভায় প্রথম স্থানে কংগ্রেস। কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ৫২,৫৫৬টি ভোট। তৃণমূল ৩৮,১৫৬টি ভোট পেয়েছে। বিজেপি ২৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন