মালদহে ইডির অফিসারেরা। নিজস্ব চিত্র।
মালদহে সারদা গোষ্ঠীর ১১টি জমি দখল নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি)। বৃহস্পতিবার জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ইডির অফিসার সুনীল কুমারের নেতৄত্বে একটি দল মালদহের ইংরেজবাজার থানার টিয়াকাটি মৌজার সারদার আটটি জমি ও লক্ষ্মীপুর মৌজার তিনটি জমির দখল নিয়ে জমির বাইরে দখলের নোটিস টাঙিয়ে দেয়।
জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা জানা গিয়েছে, ওই ১১টি জমির পরিমাণ ১০ একর ৫৫ শতক। যার বাজার দর কয়েক কোটি টাকা। ইডির সহকারি অধিকর্তা সুনীল কুমার বলেন, “মালদহে সারদার ১১টি জমির দখল নেওয়া হয়েছে। সারদা গোষ্ঠীর যে ১১টি জমি দখল নেওয়া হয়েছে, সেই জমি অন্য কাউকে যাতে হস্তান্তর না করা হয় সে ব্যাপারে নোটিশ লাগানো হয়েছে।” তদন্তকারী ইডির কর্তারা জানিয়েছেন, এই ১১ টি জমি কেনা বেচায় মালদহ জেলার কারা কারা যুক্ত ছিল, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের খুব শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মালদহ জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আদিকারিক সঞ্জীব চাকি বলেন, “দু’তিন মাস আগে ইডি আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল মালদহে সারদা গোষ্ঠীর কোথায় কত পরিমাণে জমি রয়েছে। কী সম্পত্তি রয়েছে। সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আমরা ইডিকে সারদার জমির তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।” তিনি জানান, এ দিন ইডি ইংরেজবাজার ব্লকের সারদার ১১টি জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। ইংরেজবাজার ব্লকের টিয়াকাঠি ও লক্ষীপুরে মৌজার কোন কোন জমি সারদার নামে নথিভুক্ত রয়েছে, তা চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ইংরেজবাজার ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক অচিন্ত্য ঘোষকে ইডির তদন্তকারী দলের সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল।
মালদহে সারদা গোষ্ঠীর ১১ টি প্লটে ১০ একর ৫৫ শতক জমি দখল করতে গিয়ে ইডির তদন্তকারী অফিসারেরা জানতে পেরেছেন, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন আত্মগোপন করার তিনদিন আগে মালদহের এক ঠিকাদার সুদীপ্ত সেনের কাছে থেকে টিয়াকাঠি মৌজার প্রায় ৮ বিঘা জমি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছিলেন। সারদা গোষ্ঠীর স্কুল তৈরি থেকে থেকে শুরু করে একাধিক ভবন তৈরির জন্য ওই ঠিকাদার ৬০-৭০ লক্ষ টাকা পেতেন। সারদার কর্ণধার ওই ঠিকাদারকে যে চেক দিয়েছিলেন তা ব্যাঙ্কে বাউন্স হয়। এরপরই সুদীপ্ত সেন ওই ঠিকাদারকে মালদহের টিয়াকাঠি মৌজার আট বিঘা জমি লিখে দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি ওই একই সময়ে সারদার মালদহের ইনচার্জ দেবাশিস দেবশর্মা মালদহে আমাতনতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সুদীপ্ত সেনের কাছে থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আদায় করেছিলেন। সারদার কর্ণধার পালানোর কয়েকদিন পরই ওই দেবাশিস দেবশর্মা পাওয়ার অফ অ্যার্টনি ব্যবহার করে কাঞ্চনটারের কাছে প্রায় ৪০ বিঘা জমি নিজের স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করেছিলেন।
দেবাশিস দেবশর্মা নিজের স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই জেলায় আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এরপর আমানতকারীদের অভিয়োগের পুলিশ দেবাশিস দেবশর্মাকে গ্রেফতার করেছিল। দেবাশিস দেবশর্মা ও তাঁর স্ত্রী বেশ কিছুদিন জেলে বন্দি থাকার পর এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। ইডির কর্তারা জানিয়েছেন, সুদীপ্ত সেনের কাছে যে ঠিকাদার জমি লিখিয়ে নিয়েছিলেন, ওই ঠিকাদার ও দেবাশীষ দেবশর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকা হবে।
ইডির কর্তারা এ দিন সারদার গোষ্ঠীর যে ১১টি জমি দখল নিয়েছেন, তার মধ্যে লক্ষীপুর মৌজার সারদা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভবন রয়েছে। প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি খরচ হয়েছিল অর্ধসমাপ্ত স্কুল ভবনটি তৈরিতে। ইডি কর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে সারদা গোষ্ঠীর জমি দখল করা হয়েছে। পরবর্তীতে জমির সঙ্গে জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।