মেয়ের উচ্চশিক্ষায় ভাগ্য ভরসা বাবার

দু’দশক ধরে লটারি বিক্রি করে সাংসার চালালেও, নিজের জন্য কোনও দিনই টিকিট রেখে ভাগ্য পরীক্ষা করেননি বিধান দাস। স্ত্রী মুক্তিদেবী বিড়ি শ্রমিক। চার ছেলে মেয়েসহ ছয় জনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। সে কারণে বিক্রি না করে, নিজের জন্য একটি লটারি রেখে দেওয়ার মতো বিলাসিতা কোনও দিন দেখাতে পারেননি বিধানবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০০:৫০
Share:

দু’দশক ধরে লটারি বিক্রি করে সাংসার চালালেও, নিজের জন্য কোনও দিনই টিকিট রেখে ভাগ্য পরীক্ষা করেননি বিধান দাস। স্ত্রী মুক্তিদেবী বিড়ি শ্রমিক। চার ছেলে মেয়েসহ ছয় জনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। সে কারণে বিক্রি না করে, নিজের জন্য একটি লটারি রেখে দেওয়ার মতো বিলাসিতা কোনও দিন দেখাতে পারেননি বিধানবাবু। অথচ এখন প্রতিদিন কিছু লটারি নিজের জন্য রেখে দিচ্ছেন। যদি সেই টিকিটে পুরস্কার খেলে যায় তবে মেয়েটার পড়াশোনার কিছু সুরাহা হবে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকে ফল প্রকাশের পরেই বিধানবাবুর এই স্বভাব পরিবর্তন।

Advertisement

বিধানবাবুর মেয়ে প্রতিমা এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৩৮ নম্বর পেয়েছে। তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্রনারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর। আর তার পর থেকেই মেয়ের পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিধানবাবু এবং মুক্তিদেবী। তুফানগঞ্জ শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই দম্পতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে একটাও প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বই কিনে দিতে পারেননি। গৃহ শিক্ষক রাখারও সামর্থ্য ছিল না। বিনা বেতনে দু’জন শিক্ষক পড়া দেখিয়ে দিয়েছে বলে প্রতিমা জানিয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতিমার সাফল্য স্কুল তো বটেই এলাকারও বাসিন্দাদেরও নজর কেড়েছে। যদিও দাস পরিবারের সদস্যদের চোখে মুখে খুশির সঙ্গে উদ্বেগের ছাপ বেশ স্পষ্ট। বিধানবাবুর কথায়, “মেয়েটাকে এখন কলেজে ভর্তি করার জন্য যে টাকা লাগবে সেই টাকাও ঘরে নেই। জানি না কী করে কী হবে। কলেজে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে না পারলে মেয়েটার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।”

ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চায় প্রতিমা। যদিও, আর্থিক সমস্যা ভাবাচ্ছে তাকেও। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “পড়তে তো চাই। কিন্তু জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে।” স্কুলে কলা বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বর প্রতিমার-ই। বাংলায় ৭৮, ইংরেজিতে ৯২, ভূগোলে ৯০, দর্শনে ৯০ এবং সংস্কৃতে ৮৮ পেয়েছে প্রতিমা। এন এন এম হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোপাল বিদ্যানন্দ বলেছেন, “ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায়েই আর্থিক সমস্যার প্রতিবন্ধকতা যে কাটানো যায় তার প্রমাণ প্রতিমা। আমরা ওর পাশে থাকব।” তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন জন প্রতিনিধিরাও। রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওর অভিভাবকরা যোগাযোগ করলে কলেজে ভর্তি, বইপত্র কেনা থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করব।” তুফানগঞ্জ পুরসভার সিপিএম ভাইস চেয়ারম্যান রমেশ সরকার বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে ওর জন্য কতটা কী করতে পারি তা আলোচনা করে দেখছি।”

Advertisement

আশ্বাস মিললেও, সাহায্য এখনও মেলেনি। বিধানবাবুর কথায়, “একটা আনসোলড টিকিট যদি খেলে যেত!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন