এলাকায় তৃণমূলের বহিরাগতরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
কলেজ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের (টিএমসিপি) বিরুদ্ধে বিরোধীদের আঙুল তোলা বন্ধ হল না শনিবারেও। তা উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়িতেই হোক, বা দক্ষিণবঙ্গের খড়্গপুরে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে শুক্রবার কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ময়নাগুড়ি কলেজ। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল শনিবার। অভিযোগ, কলেজ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে টিএমসিপি-র বাধা দেওয়ায় প্রত্যাশিত সংখ্যায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি এসএফআই এবং পিএসইউ। একেবারেই মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর প্রার্থীরা।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, পুলিশ এবং তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীর সামনেই এ দিন টিএমসিপি-র তাণ্ডব চলে। তবে পুলিশ এবং বিধায়ক অভিযোগ মানেননি।
বিজেপি-র অভিযোগ, বেলা দেড়টা নাগাদ এবিভিপি এবং বিজেপি-র কিছু লোক একটি ছোট গাড়িতে যাচ্ছিলেন। দুর্গাবাড়ির কাছে বিধায়কের সামনে তৃণমূল সমর্থকেরা গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে পেটানো হয় আরোহীদের। নিরঞ্জন সরকার নামে এক এবিভিপি কর্মীর মাথা ফাটে। জখম হন আরও তিন জন। অনন্তবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, “কিছু লোক একটি গাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীদের থামাই। গাড়ির আরোহীদের চলে যেতে বলি।”
বিজেপির আরও দাবি, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে হুমকি দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয় এবিভিপি কর্মীদের। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ময়নাগুড়ি কলেজ লাগোয়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে দোমহনি মোড় এবং আবদুলের মোড় এলাকায় সকাল থেকে লোকজন জড়ো করে তৃণমূল সমর্থকেরা লাঠি হাতে প্রতিটি গাড়িতে তল্লাশি চালায়। পরে বিরোধী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন বয়কটের ডাক দেওয়া হয়।
এবিভিপি-র জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির আহ্বায়ক দীপক দাসের অভিযোগ, “শহর জুড়ে তাণ্ডব চালায় তৃণমূলের গুণ্ডা-বাহিনী। যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ কর্তারা ফোন ধরেননি।” প্রায় একই সুর এসএফআইয়ের স্থানীয় নেতা স্থানীয় নেতা দীপঙ্কর পালের গলাতেও।
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অভিজিত্ সিংহ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দলের ছেলেরা কোথাও বাধা দেয়নি। মনোনয়নপত্র তুললেও কলেজে সংগঠন না থাকায় প্রার্থী খুঁজে পায়নি বিরোধীরা। তাই তাঁদের কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাননি।” পুলিশের পক্ষে জলপাইগুড়ির ডিএসপি (ক্রাইম) বিদ্যুত্ তরফদারও বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।”
কলেজের টিচার ইনচার্জ সুস্মিতা পণ্ডিত জানিয়েছেন, ৩১টি আসনের জন্য দু’দিনে মোট ৪৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ৪৬টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৩১টি টিএমসিপির, ১৪টি এসএফআই ও একটি পিএসইউ-র।
এ দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের হিজলি কলেজের এবিভিপি-র কলেজ শাখা সভাপতিকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। রাহুল সরকার নামে ওই ছাত্র এ নিয়ে তিন জনের নামে খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে।
কলেজ-ভোট যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সে জন্য এ দিন ওই কলেজে সমস্ত ছাত্র সংগঠনকে বৈঠকে ডেকেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাহুল সরকারের অভিযোগ, সেই বৈঠক সেরে ফেরার পথে কলেজের ভিতরে তাঁকে টিএমসিপি-র কলেজ শাখার সভাপতি উমাশঙ্কর রায়-সহ তিন জন হুমকি দেন। টিএমসিপি পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু ঘোষের দাবি, এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুবিকাশ জানার বক্তব্য, “বৈঠক শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। কলেজ থেকে বেরনোর পথে পুলিশ আসতে দেখেছি। ঘটনার কথা জানা নেই।”