রামঘাটে দফতর খুলল তৃণমূল

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ‘হার’ যে হয়নি, তা বোঝাতেই শিলিগুড়ির রামঘাটে দলীয় দফতর খুলে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার দুপুরে পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের এলাকার প্রথম পার্টি অফিসের উদ্বোধন হল। তবে কবে তিনি বাড়ি বাড়ি যাবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তৃণমূলের নতুন পার্টি অফিস থেকে মেরেকেটে একশো মিটারের মধ্যে রয়েছে রামঘাট শ্মশান। যাকে ঘিরে গত সাড়ে তিনমাস ধরে সরগরম শিলিগুড়ির রাজনীতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

তৃণমূল কার্যালয়ের উদ্বোধন মঞ্চে মন্ত্রীর হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দিলেন মহানন্দ মণ্ডলের স্ত্রী। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ‘হার’ যে হয়নি, তা বোঝাতেই শিলিগুড়ির রামঘাটে দলীয় দফতর খুলে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সোমবার দুপুরে পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের এলাকার প্রথম পার্টি অফিসের উদ্বোধন হল। তবে কবে তিনি বাড়ি বাড়ি যাবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তৃণমূলের নতুন পার্টি অফিস থেকে মেরেকেটে একশো মিটারের মধ্যে রয়েছে রামঘাট শ্মশান। যাকে ঘিরে গত সাড়ে তিনমাস ধরে সরগরম শিলিগুড়ির রাজনীতি।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “রামঘাটের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। শুধু এতটুকু বলব, শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য আরেকটি বৈদ্যুতিক চুল্লির প্রয়োজন রয়েছে। এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি ছাড়া অলিগলিতে যাব। সবার সঙ্গে কথা বলব।” এর পরেই মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তাই রামঘাটের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু অসামাজিক কাজ বরদাস্থ করা হবে না। পুলিশ-প্রশাসন এবং দল কড়া ব্যবস্থা নেবে।”

গত ২৮ সেপ্টেম্বরের রামঘাটের শ্মশানে শিলান্যাস অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত। দূষণের দাবি তুলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মহানন্দা মণ্ডল নামের এক বাসিন্দাকে চড় ও লাথি মারার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। পাল্টা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার এবং মন্ত্রীকে হেনস্থারও অভিযোগ ওঠে। ওইদিনের পর এদিন এলাকায় যান মন্ত্রী। ইতিমধ্যে অবশ্য দুই দফায় আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার, নাগরিক মঞ্চ গঠন, শবদেহের উপর হামলা, শিলিগুড়ি থানার আইসি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের উপস্থিতিতে রবিবার এলাকায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়া ২০ জনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, ঘটনার জেরে পাঁচনম্বর নয়, লাগোয়া অন্তত ছয়টি ওয়ার্ডে অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ চলে যায় তৃণমূল। ওই এলাকায় থাকা শহরের একমাত্র হাইমাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচনে দল হারে। ওয়ার্ডে কয়েকজন তৃণমূল নেতা থাকলেও কাজকর্ম হচ্ছিলই না। আগামী তিনমাস পরেই পুরসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। অন্য দলগুলি রামঘাটকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। প্রকল্পটি ‘স্থগিত’ হয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিকভাবেও অস্বস্তি বেড়েছে। তাই পার্টি অফিস খুলে লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির নিচে দফতরটি খোলা হয়। সকাল থেকে জলপাইমোড়, নতুনপাড়া, রামঘাট এলাকায় পুলিশের ভ্যানে ছেয়ে যায়। মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের ক্ষমতা এখানে সীমিত ছিল। এখন তা আর নেই, তাই অফিস খুললাম।”

তৃণমূলের দফতর খোলাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রামঘাট নাগরিক মঞ্চের সদস্যরা। মঞ্চের আহ্বায়ক মহানন্দ মণ্ডল বলেন, “তৃণমূলের জমায়েতে তো আশেপাশের ওয়ার্ডের লোকজনই বেশি ছিল। স্থানীয় লোকেরা তো আগ্রহই দেখালেন না। আসলে মন্ত্রী যা করেছেন তা মানুষ ভুলতে পারেনি।” তিনি জানান, আমরা বৈদ্যুতিক চুল্লি শুধু নয়, কাঠের চুল্লির শ্মশানও বন্ধ করার পক্ষে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, “মন্ত্রী প্রকল্পটি করার আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কথা বললে হয়ত গোলমাল এড়ানো যেত।”

অনুষ্ঠান চলার সময় এলাকার তৃণমূল নেত্রী বলে পরিচিত মহানন্দবাবুর স্ত্রী বিজলি মণ্ডল মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একটি পদত্যাগপত্র তুলে দেন। তিনি বলেন, “ওয়ার্ডে মহিলা কমিটির সভানেত্রী ছিলাম। ঘটনার পর থেকে আর দল করছি না। মন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। পদত্যাগপত্র হাতে দিয়ে দিয়েছি।” এই প্রসঙ্গে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “অনেকেই তো এসে অনেক কাগজ দেয়। বিজলি মণ্ডল বলে কেউ দলের ছিল বলে জানা নেই।” এদিন রামঘাটে উন্নয়নের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মন্ত্রী। তারমধ্যে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পঞ্চম মহানন্দা সেতু চালু, শহরের জমিতে পাট্টা, ছটপুজোর ঘাটে পার্ক, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় বাসিন্দাদের আনা অন্যতম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন