রেল বাজেটে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, ক্ষোভ বণিক সংগঠন, যাত্রীদের

রাতে বালুরঘাট থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি ট্রেনের দাবি ছিল বাসিন্দাদের। নব গঠিত আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দাদের দাবি ছিল শামুকতলা রোড থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ডবল লাইন তৈরি। কালিয়াগঞ্জ থেকে বুনিয়াদপুর পর্যন্ত রেলপথ পাতার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন উত্তর দিনাজপুরের ব্যবসায়ী সংগঠন ও যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৫২
Share:

রেল বাজেটে কান মোটবাহকদের। —নিজস্ব চিত্র।

রাতে বালুরঘাট থেকে কলকাতা যাওয়ার সরাসরি ট্রেনের দাবি ছিল বাসিন্দাদের। নব গঠিত আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দাদের দাবি ছিল শামুকতলা রোড থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ডবল লাইন তৈরি। কালিয়াগঞ্জ থেকে বুনিয়াদপুর পর্যন্ত রেলপথ পাতার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন উত্তর দিনাজপুরের ব্যবসায়ী সংগঠন ও যাত্রীরা। জলপাইগুড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত রেল লাইনে বৈদ্যুতিকীকরণ প্রকল্প রূপায়ণের ঘোষণা চেয়ে স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল জলপাইগুড়ির বিভিন্ন সংগঠনও। যদিও মঙ্গলবার সংসদে যে রেল বাজেট পাশ হয়েছে তাতে উত্তরবঙ্গের প্রাপ্তি শূন্যই থেকেছে বলে সাত জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ। তবে মহিলা যাত্রীদের বিশেষ নিরাপত্তার জন্য মহিলা আরপিএফ কর্মী নিয়োগ এবং অসংরক্ষিত কামরার টিকিটও ইন্টারনেটে পাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে উত্তরবঙ্গের বণিক সংগঠনগুলি।

Advertisement

সীমান্তবর্তী হিলি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ এবং রাতের বেলায় কলকাতা যাওয়ার সরাসরি ট্রেনের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা চেম্বার অব কর্মাস। রেল বাজেটে প্রত্যাশা পূরণ করেনি অভিযোগ করে পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুরের বণিক সভার তরফে অবশ্য আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কণ্ডুু বলেন, “রেল বাজেটে দিনের বেলায় রাধিকাপুর-কলকাতাগামী একটি ট্রেন, রায়গঞ্জে রেক পয়েন্ট তৈরি ও প্রস্তাবিত কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রেলপথ তৈরির কথা বাজেটে থাকবে বলে আশা করেছিলাম।” উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর ব্যবসায়ী সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “উত্তরবঙ্গে নিউ মাল-চ্যাংরাবান্ধার মতো রেল প্রকল্প বা নিউ জলপাইগুড়িতে অ্যাক্সেল তৈরির পুরনো প্রকল্পগুলির বিষয়েও কোনও দিশা নেই। এটা আমাদের হতাশ করেছে।”

রেল বাজেটের বেশ কিছু সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। বাজেটে দীর্ঘমেয়াদী বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান প্রবীর শীল জানান, উত্তরবঙ্গের জন্য নতুন ট্রেন না থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে রেলের যাত্রী সুরক্ষা, রেলে পণ্য পরিবহণের জন্য বৃহত্তর করিডর তৈরির বিষয়টি রয়েছে। মহিলা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের যে ব্যবস্থার কথা বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে তাও তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। অনুন্নত, পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন এলাকায় রেল যোগাযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ। অসংরক্ষিত ট্রেনের টিকিট ইন্টারনেটে পাওয়া গেলে নিউ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মতো জনবহুল স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে ভিড় কমবে বলে আশাবাদী যাত্রীদের একাংশ।

Advertisement

রেল বাজেট নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও। আরএসপি-র জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গকে বাজেটে বঞ্চনা করা হয়েছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলবাজেটের সঙ্গে এই বাজেটের তুলনা করেন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর একলাখি-বালুরঘাট রেলপ্রকল্পটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রাণ পায়। শুধু তাই নয় সমগ্র উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন হয়। তাঁর দাবি, বর্তমান রেল বাজেট উত্তরবঙ্গকে অনেকটাই পিছিয়ে দিল। মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের কথায়, “রেলের ভাড়া বাড়ানো হল অথচ আম আদমি ও গরিব মানুষের কোনও উপকার হয়নি।”

বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গের পর্যপেক্ষক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীর অবশ্য দাবি, অত্যন্ত জনমুখী রেল বাজেট। তাঁর কথায়, শুধু সস্তা রাজনীতি করে এতদিন রেলের যত প্রকল্প বাংলার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে, তার একটা বিপুল দায় তৈরি হয়েছে। তবে সেই প্রকল্পগুলি নিয়ে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের দাবির কথাও রেল মন্ত্রকে জানানো হয়েছে। বিশ্বপ্রিয়বাবুর দাবি, এত দিন শুধু ঘোষণা হতো, কাজ হতো না। এ বারের রেল বাজেটে উন্নয়ন এবং যাত্রী পরিষেবার স্পষ্ট দিশা রয়েছে, যা এতদিন দেখা যেত না। সিপিআই এমএল লিবারেশনের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার অভিযোগ করেন, “রেল পরিষেবায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করা হবে। পিপিপি মডেল-ই হল বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ। প্রিমিয়াম ট্রেন নয়, ভর্তুকি দিয়ে জনতা ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন