নেশার রমরমা রুখতে অভিযানের নির্দেশ

রেললাইন থেকে উদ্ধার ছাত্র, রহস্য

নেশায় আচ্ছন্ন নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে বস্তাবন্দি করে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেল লাইনে ফেলে রাখার অভিযোগ ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে। দুদিন আগে, মঙ্গলবার দুপুরে একদল কাঠকুড়ানি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৌলতে ওই ছাত্রটিকে গুলমা চা বাগান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

নেশায় আচ্ছন্ন নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে বস্তাবন্দি করে মহানন্দা অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেল লাইনে ফেলে রাখার অভিযোগ ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে। দুদিন আগে, মঙ্গলবার দুপুরে একদল কাঠকুড়ানি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দৌলতে ওই ছাত্রটিকে গুলমা চা বাগান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল ও পরে মহানন্দাপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার ছাত্রটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। ইতিমধ্যেই ছাত্রের বাবা শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কে বা কারা ওই ঘটনায় যুক্ত, কী ভাবে তার ছেলে লাইনের ধারে গেল তা নিয়ে বিশদে তদন্ত করছে পুলিশও।

Advertisement

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “ছাত্রটি এখন সুস্থ আছে। ঠিক কী ভাবে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে। এলাকায় নেশার আসর রুখতে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, প্রধাননগর থানায় ওই ছাত্রের এক বন্ধুকে ডেকে জেরাও করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ছাত্রের দেহ রেললাইনে মিললেও বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখার ব্যাপারে প্রমাণ এখনও মেলেনি, এলাকা থেকে কোনও বস্তাও উদ্ধার হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই ঘটনার খবর পৌঁছেছে শিলিগুড়ির চম্পাসারির পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া স্কুলেও। স্কুলের তরফেও পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, ওই ছাত্রকে যে দিন রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়, তার পর দিন থেকে কয়েকজন ছাত্র স্কুলে অনুপস্থিত। স্কুলের তরফে ওই ছাত্রদের অভিভাবকদের ডেকে আলোচনা করা হবে বলে কয়েকজন শিক্ষক জানান।

Advertisement

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “ওই ছাত্রটি স্কুলের ভাল ফুটবলার। পড়াশোনাতেও মনোযোগী। ও কী ভাবে এমন সংসর্গে গিয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না। আচ্ছন্ন অবস্থায় থাকা ছাত্রকে বস্তায় মুড়ে রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ আমরাও শুনেছি। যা সত্যি হলে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ঘটনার পর দিন থেকে ক্লাস নাইনের কয়েকটি ছাত্র অনুপস্থিত রয়েছে। খোঁজ নিচ্ছি।”

শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে চম্পাসারি লাগোয়া মহানন্দা নদীর ধারের একটি কলোনিতে ওই ছাত্রের বাড়ি। তার বাবা একটি ছোট্ট মুদি দোকান চালান। অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। এলাকায় ভাল ছেলে ও খেলায়োড় হিসেবেই ছাত্রটি পরিচিত। সাধারণত, সে কোনদিন স্কুল ফাঁকি দেয় না বলে বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছাত্রটি ৫-৬ জন বন্ধুর সঙ্গে গুলমা চা বাগান লাগোয়া এলাকায় যায়। পুলিশের সন্দেহ, ওই এলাকায় তাকে নেশায় হাতেখড়ি হয়। সেই সময়ে গাঁজা ও আঁঠালো কোনও পদার্থএর জেরে ছাত্রটি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময়ে বাগানের চৌকিদারকে দেখে সকলে পালাতে যায়। তখনই ছাত্রটি ঢাল বেয়ে গড়িয়ে রেললাইনের ধারে পড়ে যায়। তার বাবা বলেন, “কতক্ষণ ও পড়েছিল জানি না। তবে কোনওমতে আমার মোবাইল নম্বরটা ও বলেছিল। সেই সূত্রে আমরা ওখানে ছুটে যাই। প্রথমে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে মহানন্দাপাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। এখন ছেলে ভাল রয়েছে।” তা হলে বস্তাবন্দি করে ফেলার অভিযোগ উঠল কেন? ছাত্রের বাবা, জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে বিশদে তদন্তের অনুরোধ করেছেন।

কয়েকজন ছাত্র অবশ্য জানিয়েছে, তারা জানতে পেরেছে অজ্ঞান হয়ে গেলে ছাত্রটিকে লাইনের ধারে ফেলে রাখা হয়। ছাত্রের দেহ বস্তায় মুড়ে রেললাইনে ফেলে রাখার অভিযোগও কয়েকজন করেছে। বাগানের কয়েকজন কর্মী জানান, তাঁরা গিয়ে দেখেন, কয়েকজন কাঠকুড়ানি বস্তা নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। রেললাইনের ধারে ওই কিশোর আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই জরুরি বৈঠক ডেকে অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন