রেশন-কার্ড নিয়ে অনিয়ম, অভিযোগে পথে বিরোধীরা

উত্তর দিনাজপুর জেলায় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে ডিজিটাল রেশনকার্ড বিলির কাজে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পৃথকভাবে আন্দোলনে নামল এসএউসি ও বামফ্রন্ট।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৩
Share:

রেশন-কার্ড নিয়ে অনিয়ম, অভিযোগে পথে বিরোধীরা রায়গঞ্জে পথ অবরোধ। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

উত্তর দিনাজপুর জেলায় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে ডিজিটাল রেশনকার্ড বিলির কাজে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পৃথকভাবে আন্দোলনে নামল এসএউসি ও বামফ্রন্ট।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ এসইউসির শতাধিক কর্মী সমর্থক প্রায় আধঘণ্টা রায়গঞ্জের মোহনবাটি এলাকার রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। একই সময়ে বামফ্রন্টের শতাধিক কর্মী সমর্থক রায়গঞ্জের কর্ণজোড়া এলাকায় জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। এরপর আন্দোলনকারীরা জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিকের কাছে ছ’দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।

জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সাহাজাদ আহমেদের দাবি, খুব দ্রুত জেলার আরও ৬ লক্ষ বাসিন্দাকে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া হবে। সরকারি নির্দেশে প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা জেলার বাকি আরও তিন লক্ষ বাসিন্দা খুব শীঘ্রই রেশন ডিলারদের মাধ্যমে ওই প্রকল্পে নির্ধারিত দামে চাল, গম ইত্যাদি পাবেন।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট রেশনকার্ডধারী বাসিন্দা রয়েছেন রয়েছেন ২৮ লক্ষ। তাঁদের মধ্যে বিপিএল তালিকাভুক্ত বাসিন্দা রয়েছেন সাড়ে ৬ লক্ষ। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত, পুরসভা ও বিডিও অফিসের মাধ্যমে এপিএল ও বিপিএল মিলিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৯ লক্ষ বাসিন্দাকে ডিজিটাল রেশনকার্ড দেওয়া হয়েছে। আরও ৬ লক্ষ বাসিন্দাকে ওই কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এসইউসির জেলা সম্পাদক দুলাল রাজবংশী ও বামফ্রন্টের রায়গঞ্জ জোনাল চেয়ারম্যান উত্তম পাল পৃথকভাবে হলেও একই সুরে অভিযোগ করেন, জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ রেশন কার্ডধারী গরিব বাসিন্দা এখনও পর্যন্ত ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি। অথচ বিত্তশালীদের একাংশ ডিজিটাল রেশনকার্ড পেয়ে গিয়েছেন। এতেই দুর্নীতি স্পষ্ট হয়েছে।

দু’জনেরই অভিযোগ, নির্বাচনের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পে স্বচ্ছতা ফেরানোর বদলে তৃণমূলকে রাজনৈতিক সুবিধা করে দিতে সবাইকে খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। অবিলম্বে প্রকল্পে স্বচ্ছতা এনে জেলার সমস্ত বাসিন্দাকে ডিজিটাল রেশনকার্ড দেওয়া না হলে দলের তরফে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামা হবে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘কোনও বড় প্রকল্প কার্যকরী করতে গেলে সামান্য ভুলভ্রান্তি হয়। তবে ডিজিটাল রেশনকার্ড বিলির ক্ষেত্রে সেই ভুলভ্রান্তি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বাকি সমস্যাগুলি দ্রুত মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’

জেলার সমস্ত বাসিন্দাকে খাদ্য সুরক্ষা বিলের আওতায় আনার দাবিতে মহকুমা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেয় আলিপুরদুয়ারের সিপিএম নেতৃত্ব। আলিপুরদুয়ারের জেলা খাদ্য নিয়ামকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ডিজিটাল রেশনকার্ড আসেনি। ফলে আগামী মাসে নির্বাচন ঘোষণা হলে ডিজিটাল রেশনকার্ড বন্টণ কতটা করা সম্ভব তা তারা বুঝতে পারছেন না।

খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পে দক্ষিণ দিনাজপুরে উপভোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১২ লক্ষ ১২ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু জেলা খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৯ লক্ষের কিছু বেশি উপভোক্তার মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি করা সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় দাবি করেন, ডিজিটাল কার্ড বিলির কাজ চালু আছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের নিজস্ব খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় কার্ড বিলির কাজও চলছে।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির মতোই রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় উপভোক্তারা ২ টাকা কেজি দরে চাল ও গমের সরবরাহ পাবেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার লোকসংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ। কেন্দ্র ও রাজ্যের ওই খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় চলে আসছে অন্তত প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ মানুষ। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি শেষ না হওয়ায় উপভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এ দিন খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে অনিয়ম ও ডিজিটাল কার্ড বিলি সহ একগুচ্ছ দাবিতে বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে কুমারগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন