গাজলডাঙার কাছে টাকিমারি এলাকায় লঙ্কা চাষ। —নিজস্ব চিত্র।
ফলন ভাল। খেত ভরেছে লঙ্কায়। কিন্তু ভাল ফলনের পরেও দাম না পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে মালবাজার ব্লকের লঙ্কা চাষিদের। চলতি মরশুমে আবহাওয়া লঙ্কা চাষের অনুকূল হওয়ায় গাছ ভরেছে লঙ্কায়। তা সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় অনেক কম দামে পাইকারদের কাছে লঙ্কা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।
মালবাজারের ক্রান্তি এলাকার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত চাপাডাঙা, চ্যাংমারি, ক্রান্তি, রাজডাঙা, লাটাগুড়ি এবং ওদলাবাড়িতে গত বছর লঙ্কা চাষিরা ভাল দাম পেয়েছিলেন। শীতের শুরুতে গাছ লাগিয়ে ফেব্রুয়ারির পর থেকেই লঙ্কা তুলে বিক্রি করে কেজি প্রতি ৩২ টাকা থেকে ৩৮ টাকা পাইকারি দাম মেলে তাদের। গত মরশুমের অভিজ্ঞতায় চলতি মরশুমে আরও বেশি জমিতে লঙ্কা চাষে উদ্যোগী হন চাষিরা। ফলনও গত বছরের তুলনায় আরও ভাল হওয়ায়, আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন লঙ্কাচাষিরা।
কিন্তু পাইকারি বাজারে আচমকাই লঙ্কার দাম পড়ে যাওয়ায় এবার কেজি প্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকা দাম পেতেও সমস্যা হচ্ছে চাষিদের। এই অবস্থায় সার আর বীজের দাম তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে চাষিদের অভিযোগ। ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের গজলডোবা এলাকার লঙ্কা চাষি অধীর দাস জানালেন, গত বছর তিনি একবিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেছিলেন। ভাল দাম মেলাতে এবার তিনি আরও ১০ কাঠা জমি বাড়িয়ে মোট দেড়বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেন। ফলন ভাল হওয়ার পর পাইকারি বাজারে দাম বাড়বে বলেই আশা করেছিলেন। কিন্তু ১৮ টাকা প্রতি কেজির দাম শুনে তাঁর মাথায় হাত পড়েছে। ক্রান্তি এলাকার হরি মাতব্বর, নিমাই দাসদের মত লঙ্কা চাষিদেরও একই অবস্থা। ভিনরাজ্যের সরু, লম্বা আকৃতির লঙ্কা যেটি মাইক্রো লঙ্কা বলেই বেশি পরিচিত তা বাজারে ঢুকে পড়ায় দেশীয় বুলেট লঙ্কা যার আকৃতি বেঁটে এবং মোটা তা গুরুত্ব হারিয়েছে বলেই ধারনা চাষিদের।
মালবাজার মহকুমার মৌলানি গ্রাম পঞ্চায়েতের লঙ্কা চাষি প্রাণবন্ধু কবিরাজের কথায়, “মাইক্রো লঙ্কা থাবা বসানোয় দাম মিলছে না। গতবার যেখানে ময়নাগুড়ির পাইকারদের কাছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে লঙ্কা বিক্রি করেছি। সেখানে এবার ২০ থেকে ২২ টাকাতেই লঙ্কার দাম থেমে থাকছে।”
তবে ভিনরাজ্যের লম্বা সরু লঙ্কার থেকে বুলেট লঙ্কা গুণগত মানে কম নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারনা। জলপাইগুড়ি জেলা হর্টিকালচার আধিকারিক শুভাশিস গিরি বলেন, “বুলেট লঙ্কার জাত যথেষ্ট ভাল এবং এতে ঝালও যথেষ্ট হয়। চাষিদের উৎপাদনগত কোন সমস্যাও হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাম না মেলার বিষয়টি দেখব।” উত্তরবঙ্গে লঙ্কা চাষে কোচবিহার জেলার পরেই স্থান জলপাইগুড়ির। তবে দাম না মিললে চাষিরা লঙ্কা চাষে উৎসাহ হারাবেন বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি আধিকারিকরা। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি চাষিদের সমস্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।