শিলিগুড়ি

শহর বন্দি পার্কিং-ফাঁসেই

সিকিম-দার্জিলিং বেড়িয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং মেলে কলকাতা যাচ্ছিল ইংল্যান্ডের ৮ জনের পর্যটক দলটি। বেলা ১২টা নাগাদ দুটি বিলাসবহুল গাড়িতে শিলিগুড়িতে পৌঁছেছিলেন তারা। উদ্দেশ্য ছিল, শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা। কিন্তু, এয়ারভিউ মোড় থেকে শুরু করে হাসমি চক, বিধান রোড থেকে সেবক রোড, প্রতি পদে ভোগান্তি হল হয়েছে তাঁদের।

Advertisement

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

রাস্তার উপরেই পার্কিং। হাঁটার উপায় নেই। বাড়ছে যানজটও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

সিকিম-দার্জিলিং বেড়িয়ে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং মেলে কলকাতা যাচ্ছিল ইংল্যান্ডের ৮ জনের পর্যটক দলটি। বেলা ১২টা নাগাদ দুটি বিলাসবহুল গাড়িতে শিলিগুড়িতে পৌঁছেছিলেন তারা। উদ্দেশ্য ছিল, শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা। কিন্তু, এয়ারভিউ মোড় থেকে শুরু করে হাসমি চক, বিধান রোড থেকে সেবক রোড, প্রতি পদে ভোগান্তি হল হয়েছে তাঁদের। কারণ, কোথাও দুটি গাড়ি পাশাপাশি রাখার জায়গা পাননি। গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করতেই দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় চলে যায়।

Advertisement

সে যাত্রায় ফেরার পরে বিলেত থেকে পর্যটক দলের প্রধান দার্জিলিঙের ট্যুর অপারেটর দলের গাইড সোনম লামাকে ই-মেল করে সেই ভোগান্তির কথা জানিয়ে সখেদে লিখেছিলেন, দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে পথের ধারে যতটা জায়গা রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার করলে পার্কিংয়ের সমস্যা অনেকটাই কমে যেতে পারে। লন্ডনের মেয়রের নাগরিক পরামর্শদাতা কমিটির সঙ্গে যুক্ত ওই পর্যটক এটাও লিখেছিলেন, ব্যস্ত রাস্তার ধারে কখনও দিনভর কোনও একজনকে গাড়ি দাঁড় করানোর অনুমতি দেওয়া যায় না। সে জন্য পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করানো জরুরি।

দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরের কর্তা সম্রাট সান্যালও। তিনি বললেন, “দার্জিলিঙে পার্কিংয়ের সমস্যা ভয়াবহ। শিলিগুড়িতেও পর্যটকদের গাড়ি রাখা নিয়ে হয়রানির শেষ নেই। অনেকে ফিরে গিয়ে সে কথা জানিয়ে দিতে ভোলেন না। আমরা পুরসভা-প্রশাসনের কাছে সেই সমস্যার কথা অতীতে তুলে ধরেছি। আগামী দিনেও ফের তুলে ধরব।”

Advertisement

পাহাড়ের কথা এখন থাক। আপাতত শিলিগুড়িই আলোচ্য। শিলিগুড়ি পুরসভার অন্তত ৩০ জন প্রাক্তন কাউন্সিলরের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তাঁরা সকলেই একটা ব্যাপারে একমত, শিলিগুড়িতে রাস্তার ধারে যতটা জায়গা রয়েছে তা ঠিকঠাক ব্যবহার করা গেলে শহরের পার্কিং সমস্যা অনেকটাই মিটে যেত। এমনকী, যানজটও কমত। শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা মেয়ার পারিষদ সুজয় ঘটকের কথায়, “লন্ডন অনেক দূর। আমাদের শিলিগুড়িতেই অনেক ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাঁরাই কতবার পুরসভাকে পরামর্শ দিয়েছেন। সেই মতো কাজ হয়নি বলেই সমস্যা মেটেনি।”

ঘটনা হল, কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নিলেও পুরসভা এগোতে পারে না। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, সত্তর দশকেও শহরের রাস্তার ধারে দিনভর কেউ গাড়ি, দু-চাকার যান দাঁড় করিয়ে রাখতে পারতেন না। পুরকসভার তরফে কড়াকড়ি করা হতো। পুলিশও জরিমানা করত।

প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, সে সময়ে ব্যস্ত রাস্তার ধারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের যানবাহন রাস্তা জুড়ে রাখতেন না। বরং, ক্রেতাদের যানবাহন যাতে রাখার অসুবিধে না হয় সে দিকে নজর দিতেন। হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিচির একাধিক সদস্য একান্তে মানছেন, এখন ক্রেতাদের কথা ভাবার সময় অনেকেরই নেই। সকলেই যে ভাবে হোক নিজের একাধিক গাড়ি, বাইক রাস্তার ধারে রাখার ব্যবস্থা করতেই বেশি তৎপর। সে জন্যই দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তো দূরের কথা, স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যন্ত যানবাহন রাখার জন্য একটু জায়গা পেতে হিমশিম খান।

অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। কারণ, শহরের নানা রাস্তায় ‘ফি’ দিয়ে যানবাহান রাখার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। সে জন্য অন্তত ১৬ জনকে ‘লাইসেন্স দিয়েছে পুরসভা। বিধি অনুযায়ী, রাস্তার দুধারের চিহ্নিত অংশে যানবাহান রাখলে ঘন্টা প্রতি ফি নিতে পারেন ওই লাইসেন্স প্রাপ্তরা। ওই লাইসেন্স দেওয়ার সময়ে পুরসভার তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ পার্কিং-এর জন্য বরাত পাওয়া অংশ সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিতে পারবেন না। কিন্তু, শহরবাসীর অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।

হাসমি চক থেকে শুরু করে প্রধাননগর পর্যন্ত গেলে রাস্তার দুধারে দেখা যাবে বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একই নম্বরের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। হিলকার্ট রোডে যে যাঁরা দোকানের সামনে লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে রাখেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসের সামনে সংস্থার নাম লিখে রাস্তার ধারে পার্কিং ‘দখল’ করে নেওয়া হয়েছে। বড় ব্যবসায়ী তো বটেই, সম্প্রতি একটি বাতানুকূল পানের দোকানের দোকানের উদ্বোধন করেছিলেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। পর দিন থেকে দেখা গিয়েছে, ওই পান দোকানের সামনে রেলিং দিয়ে পুরসভার পার্কিং-এর জায়গা ঘিরে রাখা হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই ব্যবসায়ীর মন্তব্য, “পুরসভা কিছু বলছে না। পুলিশ কিছু বলছে না। তা হলে অসুবিধে কোথায়?”

পুর আইন অনুযায়ী, এ ভাবে রাস্তার ঘারে আমজনতার জন্য নির্ধারিত কোনও পার্কিংয়ের জায়গা সরকারি কিংবা বেসরকারি, কোনও সংস্থা ঘিরে রাখতে পারে না। তা সে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কই হোক কিংবা হোটেল। সেই আইনি শিলিগুড়িতে মানে কে? হিলকার্ট রোডে মেঘদূত সিনেমা হলের উল্টোদিকে পর পর হোটেলের সামনে বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীরা ঠিক করেন, কে গাড়ি রাখবেন? সেখানে পুরসভা দর্শক। পুরসভা কী হোটেল মালিকদের রাস্তার ওই অংশে গাড়ি কে দাঁড় করাবে তা ঠিক করার জন্য লিজ দিয়েছে? জবাবে এক হোটেল ব্যবসায়ীর পাল্টাপ্রশ্ন, “মেঘদূতের পাশের বিশাল ভবনের সামনে কী হচ্ছে সেটা কারও নজরে পড়ছে না কেন?”

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন