সেই মহানন্দকে তৃণমূলে টানতে সক্রিয় গৌতম

যাঁকে চড় মারার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মহানন্দ মণ্ডলকে দলে টানতে আসরে নামলেন খোদ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীল শর্মা মহানন্দবাবুকে নিয়ে গৌতমবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রীর তরফে তাঁকে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

উত্তরকন্যায় তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীল শর্মার সঙ্গে মহানন্দ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

যাঁকে চড় মারার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মহানন্দ মণ্ডলকে দলে টানতে আসরে নামলেন খোদ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীল শর্মা মহানন্দবাবুকে নিয়ে গৌতমবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রীর তরফে তাঁকে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

Advertisement

যদিও মহানন্দবাবু তৃণমূল নেতৃত্বের প্রস্তাবে রাজি হননি বলে জানিয়েছেন। বামেদের তরফে মন্ত্রীর পদক্ষেপকে ‘ভয় ভীতির’ রাজনীতির দ্বিতীয় পর্যায় বলে কটাক্ষ করেছেন।

গত বছর সেপ্টেম্বর রামঘাটে শ্মশানের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ‘প্রতিবাদ’ করায় এই মহানন্দ মণ্ডলকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রী গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে। পাল্টা মন্ত্রীকে হেনস্থা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনি জেলও খাটেন। পরে আরেক দফায় গোলমালে শিলিগুড়ি থানার আইসি’র গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই মামলাতেও জেল খাটেন মহানন্দবাবু-সহ ২২ জন। সেই মামলা এখনও চলছে।

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতা রঞ্জনবাবুই মহানন্দবাবুকে সঙ্গে করে এদিনই উত্তরকন্যায় নিয়ে যান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে বৈঠক সেরে শাখা সচিবালয়ে আসেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। গত বছরের রামঘাটের গোলমালের পর এদিনই প্রথম মহানন্দবাবুর সঙ্গে মন্ত্রীর সামনা সামনি কথা হয়। মন্ত্রী অবশ্য তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা সরাসরি না বললেও এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। গোলমালের ঘটনায় জড়িতদের মামলা সম্পর্কেও তিনি খোঁজ নেন। শেষে এলাকার লোকজনকে নিয়ে বৈঠকে বসার আগ্রহের কথা মহানন্দবাবুকে জানান।

এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “এই নিয়ে এখনই কোনও কথা বলছি না। তবে আমাদের সরকার যে কোনও উন্নয়নের কাজে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পক্ষপাতী।” আর তৃণমূল নেতা রঞ্জনবাবু বলেন, “আরে মহানন্দ তো আমেদেরই ঘরের ছেলে! ও তো সক্রিয়ভাবে তৃণমূলই করত। অন্য দলে যোগ দিয়েছে কী হয়েছে। আমরা কথা বলতে যেতেই পারি। আর মন্ত্রীর সঙ্গে যে কোনও এলাকার লোকজন দেখা করতেই পারেন। আর ভোটে কী হবে এখনই কি কিছু বলা যায়!”

মহানন্দবাবু অবশ্য সাফ বলেছেন, “মন্ত্রীর পদকে সম্মান জানিয়েই উত্তরকন্যায় দেখা করতে গিয়েছিলাম। মন্ত্রী এলাকার উন্নয়ন নিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। তবে আমি একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। এতদিন যাঁরা আমার সঙ্গে আছে, সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করব।”

আর দলবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে আমি সবে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দিয়েছি। বিপদের সময় দলের নেতারা আমাদের পাশে ছিলেন। এখনই দল ছাড়ার কোনও ব্যাপার নেই।”

ঘটনাকে ঘিরে গোটা পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। চলতি মাসেই মহানন্দবাবু শতাধিক অনুগামীদের নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী তথা প্রাক্তন ওয়ার্ড মহিলা তৃণমূল নেত্রীও ওই বাম দলে যান। এলাকার স্কুলে কয়েকশো বাসিন্দাকে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বিরাট সভাও করেন মহানন্দবাবুরা। এতে আগামী ভোটে ওয়ার্ডে কী হতে চলেছে তা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।

এলাকার বহু বাসিন্দার অভিযোগ, “শাসক দলের নির্দেশে পুলিশ গত পাঁচমাস ধরে বাসিন্দাদের হেনস্থা করেছেন। গোলমালের ঘটনায় জড়িয়ে বহু লোক জেলেও খাটলেন। আর এখন পুরভোট আসতেই মন্ত্রী, নেতারা সুর বদলে ফেললেন। আসলে আসন্ন ভোটের জন্য তৃণমূল ওই কাজ করেছেন।” আবার অনেকে জানিয়েছেন, গোলমালের জেরে বহু দুঃস্থ বাসিন্দা জেল, মামলার জেরে তাঁরা জেরবার হয়ে উঠেছেন। বিষয়টিকে সামনে রেখে বাসিন্দাদের সাহায্যের কথা বলে এলাকায় নতুন করে সংগঠন করার চেষ্টা শুরু করে তৃণমূল।

এই প্রসঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “এমন প্রলোভন আসবে। এলাকার আমাদের শক্তি নিশ্চয়ই বেড়েছে, তাই তৃণমূল নেতা চিন্তিত বোঝা যাচ্ছে। মহানন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁর দল ছাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আর কেউ ডাকলে গিয়ে কথা বলাটা সৌজন্যের পরিচয়।”

জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “এটা ভয়ভীতির রাজনীতির দ্বিতীয় পদক্ষেপ। প্রথমে মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাও। পরে উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় নেমে এলাকায় দলের সংগঠন বানাও।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, মন্ত্রী এলাকায় কী করেননি, মহানন্দকে মারধর ছাড়াও লোকজনকে পুলিশ গিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। এখন এলাকায় ভোটে হার আশঙ্কা করেই সুর পাল্টে ফেলছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন