নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। অনেক সময় প্রাইভেট টিউশনে শিক্ষকদের বেতনও দিতে পারেনি। তার পরেও সব প্রতিকূলতা জয় করে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রায়গঞ্জের শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনের ছাত্র রাহুল পাল। ৬১৭ নম্বর পেয়ে রাহুলই স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। শুক্রবার রাহুলকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সংবর্ধনা দিয়েছেন। রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মোহিত সেনগুপ্ত রাহুলের হাতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৬০০ টাকা তুলে দিয়েছেন। রাহুল মাধ্যমিকে ফল করে স্কুলের মুখ উজ্বল করায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের মধ্যে খুশির হাওয়া ছড়ালেও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে রাহুল ও তার বাবা পুলকবাবু। রায়গঞ্জের বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা পুলকবাবু পেশায় চাষি। পৈতৃক কয়েক বিঘা জমিতে সারাবছর চাষাবাদ করে তিনি সংসার চালান। ছোট ছেলে তুষার স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী ছায়াদেবী ছেলেদের পাশাপাশি সংসার সামলান।
পুলকবাবু বলেন, “ছেলে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করতে চায়। আর্থিক অনটনের জেরে ঠিকমত সংসার চালাতে পারিনা। কীভাবে ছেলেকে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক কিনে দেব আর কোথা থেকে প্রাইভেট টিউশনের খরচ জোগাড় করব তা বুঝতে পারছি না। সাহায্য না পেলে ছেলের পড়াশুনো হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।” রাহুল বলে, “মাধ্যমিকে তিনজনের কাছে পড়তাম। শিক্ষকদের বেতনই দিতে পারতাম না। উল্টে শিক্ষকেরা আমাকে বই, খাতা দিয়ে সাহায্য করতেন। ভবিষ্যতে কী করব জানি না, এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পারব না বুঝতে পারছি না।” এ বার রাহুল বাংলায় ৭৭, ইংরেজিতে ৮১, অঙ্কে ৮৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯০ ও ভুগোলে ৯৫ পেয়েছে।
রাহুলকে সাহায্যের আশ্বাস দেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীলমাধব নন্দী। তিনি বলেন, “রাহুলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনার ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ নজর রাখবে।”