স্বাগত সব দল, মন্ত্রীর আহ্বানে গুঞ্জন শহরে

বিজেপি সম্পর্কে সম্পর্কে তাঁর ছুত্‌মার্গ রয়েছে বলে শোনা যায়। সম্প্রতি উত্তরায়ন উপনগরীর একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে জেলা বিজেপি’র এক নেতা উপস্থিত থাকায় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যেতে চাননি বলেও অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

শিলিগুড়ি কার্নিভ্যালের লোগো বসানো গেঞ্জি, টি-শার্ট, জ্যাকেট উদ্বোধন করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বিজেপি সম্পর্কে সম্পর্কে তাঁর ছুত্‌মার্গ রয়েছে বলে শোনা যায়। সম্প্রতি উত্তরায়ন উপনগরীর একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে জেলা বিজেপি’র এক নেতা উপস্থিত থাকায় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে যেতে চাননি বলেও অভিযোগ। ওই নেতা অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলেও অভিযোগ। এ হেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব মঙ্গলবার বিকালে নিজের দফতরে শিলিগুড়ি কার্নিভালের সাংবাদিক বৈঠক করে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তাতে সামিল হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর তাতেই শহর জুড়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “শিলিগুড়িকে ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরার জন্যই এই কার্নিভ্যাল। সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা থেকে শুরু করে বহু সংস্থা, সংগঠন এরসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। সাতদিনব্যাপী শহর জুড়ে নানা অনুষ্ঠান হবে। মানুষকে রাস্তায় নেমে সামিল হতে অনুরোধ করছি। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে শিলিগুড়ির স্বার্থে সামিল হতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’’

আগামী ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে একটি র্যালির মাধ্যমে শিলিগুড়ি কার্নিভ্যালের সূচনা হবে। চলবে ২১ ডিসেম্বর অবধি। পর্যটন মেলা, ফুড ফেস্টিভ্যাল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-সহ কলকাতা ও মুম্বই শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এর পরেই জানুয়ারি মাসে হবে উত্তরবঙ্গ উত্‌সবও। প্রশাসক বোর্ডের হাতে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভাকে সামনে রেখে এই ধরনের কার্নিভাল করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নানা রাজনৈতিক দলের নেতারা।

Advertisement

সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “নির্বাচিত বোর্ড ছাড়া এ ধরণের কার্নিভ্যাল করাটা অনৈতিক। সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে পুরভোটের আগে এটা তৃণমূলের উত্‌সব। কার্নিভ্যালে তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলরদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদলের তো কোনওদিন কাউকে ডাকা হয়নি। এখন লোক দেখাতে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে।” এ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো অসৌজন্যমূলক বলে মনে করেন শহরের প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “আজ অবধি একটা চিঠি পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। সব চূড়ান্ত করে সবাইকে ডাকা অসৌজন্যমূলক।”

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, “পুরভোটের আগে শহরে নিজেদের প্রচারের জন্যই কার্নিভ্যাল হচ্ছে।” যেমন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “এটা তো জবরদখলের কার্নিভাল। নির্বাচিত পুরবোর্ড বোর্ড মিটিং করে বাজেট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন অনুষ্ঠান করবে। সেখানে মন্ত্রী নিজেকে তুলে ধরতে এসব করছেন। লোক দেখাতে আমাদের ডাকার কথা বলা হচ্ছে।”

মন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পর কংগ্রেসের মতই সৌজন্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপিও। দলের জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, “আমরা ওখানে গিয়ে কী করব? নাচ-গান দেখব, না কি রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সমস্যা দেখব। আমরা কোনও অনুষ্ঠানে থাকলে সেখানে তো উনি যেতেও চান না। ওঁর সৌজন্যবোধ নিয়ে আমাদেরও সন্দেহ রয়েছে।”

বিরোধীদের আবার কেউ কেউ বলছেন, শহরের বিপর্যস্ত নাগরিক পরিষেবা থেকে মানুষের চোখ ঘোরাতেই এই কার্নিভ্যাল করা হচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, রামঘাটকে ঘিরে জ্বলন্ত শিলিগুড়ির সঙ্গে মজা করছেন মন্ত্রী। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সম্পাদক অভিজিত্‌ মজুমদার বলেন, “নাগরিক পরিষেবা বিপর্যস্ত। প্রশাসক বোর্ডকে দিয়ে সেই সব কাজ না করিয়ে মন্ত্রী তাঁদের দিয়ে উত্‌সব করাচ্ছেন। আসলে উত্‌সবটা তৃণমূলের অন্দরে ঢুকে গিয়েছে।”

একধাপ এগিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেছেন, “আমাদের বিধায়ককে শহরে কলার ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে। কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার আমাদের সামিল হওয়ার আহ্বান করছেন। এতো রোমের রাজা নিরোর মত মজা করার ঘটনা।” আর কার্নিভ্যালটা কী তাই বুঝে উঠতে পারেননি নকশাল নেতা শ্রীধর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কী হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে কিছুই জানি না। আসলে কোনওদিন তো আমাদের এ সবে ডাকা হয় না। মুখে মুখে আমন্ত্রণের কথা শুনি খালি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন