ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারের ভারতীয় ভূখন্ডের জমির ফসল দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে ওই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, বিএসএফ কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত লাগোয়া বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়লাডাঙ্গি, মননগর ও বহর গ্রামের পাঁচটি সংসদের কয়েকশো চাষির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ফলে তাঁরা চাষে নেমে লোকসানের মুখে পড়েছেন। এরকম চলতে থাকলে আগামী মরশুমে কাঁটাতারের ওপারে নিজস্ব জমিতে তাঁরা চাষাবাদ বন্ধ করে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন চাষিদের একাংশ। বিএসএফের কিসানগঞ্জ রেঞ্জের ডিআইজি পিএস পাওয়ারকে ফোন করা হলে তাঁর দফতর থেকে জানানো হয় তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এক্ষেত্রে পুলিশের কিছু করণীয় নেই!
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধান বলেন, “রায়গঞ্জের বিডিওকে চাষিদের অভিযোগ খোঁজ নিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। চাষিদের অভিযোগ সত্যিই হলে অবশ্যই প্রশাসন বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। প্রায় ১০ কিলোমিটার কাঁটাতারের ওপারে প্রায় ৬ হাজার বিঘা ভারতীয় জমি রয়েছে। প্রায় চার দশক আগে ভৌগলিক কারণে কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর সময়ে ভারতীয় সেই জমি কাঁটাতারের ওপারে চলে যায়। কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় জমি থেকে ১৫০ মিটার দূরে বাংলাদেশ ভূখন্ড।
বাংলাদেশের নিজস্ব সীমান্ত বরাবর কোনও কাঁটাতার না থাকায় ওই এলাকাটি উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। কয়লাডাঙ্গি, মননগর ও বহর গ্রামের পাঁচটি সংসদের প্রায় আড়াই হাজার চাষি সারা বছর কাঁটাতারের ওপারে গিয়ে তাঁদের জমিতে ধান ও গম চাষ করেন। চাষিরা যাতে কাঁটাতারের ওপারে গিয়ে চাষাবাদ করে ফিরে আসতে পারেন, সে জন্য বিএসএফ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা, বেলা ১১টা থেকে ১২টা ও বিকাল ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের গেট খোলা রাখে। বিএসএফের নজরদারিতেই চাষিরা দিনভর চাষাবাদ করেন। বর্তমানে বিন্দোলের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা গম চাষ করার বোরো ধান রোপণের কাজ শুরু করেছেন। গত নভেম্বর মাসে চাষিদের লাগানো গম আগামী মার্চ মাসে ওঠার কথা।
বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তথা এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মনসুর আলির অভিযোগ, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চাষিরা কাঁটাতারের ওপারে চাষাবাদ করে ফিরে আসেন। কিন্তু, রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বাসিন্দাদের একাংশ ভারতীয় জমিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ঢুকিয়ে ধান ও গম খাইয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফসল কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। কয়েকমাস আগে ভারতীয় চাষিরা প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশিরা ভারতীয় জমিতে থাকা একটি ধানের গোলায় আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কয়লাডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা আলি মহম্মদ জানান, কাঁটাতারের ওপারে তাঁর ৮ বিঘা জমিতে এবছর তিনি ২৫ হাজার টাকা খরচ করে গম চাষ করছেন। তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা আমার জমির গমগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন চাষের খরচটুকু উঠবে কি না, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”