শৌচাগারের জলে বারান্দা থইথই। সেখান দিয়েই যাতায়াত করতে হয় আবাসিকদের। হোম চত্বরে আগাছার জঙ্গলে সাপের ভয়। আবর্জনার স্তূপ পাশেই। যেখানে দিনের খাবারের মেনু লিখে রাখার কথা, সে দিকে তাকালে কিছু বোঝা দায়।
এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোম। সেখানে আবাসিকদের মুখ ফুটে প্রতিবাদের উপায় নেই। কারণ তারা অধিকাংশই যে মূক ও বধির। সে জন্য অনেকেই মাঝে মধ্যে পাঁচিল টপকে, নজর এড়িয়ে পালায়। এক বছরে ১৩ জন পালিয়েছে। ৬ জনের খোঁজ মিলেছে। উদ্ধারও করা হয়েছে। বাকিরা কোথায় এখনও কেউ জানে না।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে হোম পরিদর্শন করতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখেন রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের ডিরেক্টর সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। যা দেখেশুনে তিনি কখনও বিরক্ত হন, কখনও ফেটে পড়েন ক্ষোভে। আবার কখনও ভর্ৎসনা করেছেন হোমের দায়িত্বপ্রাপ্তদের। হোমের অধ্যক্ষকে তিনি বলেন, “পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েছে সেটা ঠিক। যতটা যা হাতে রয়েছে তার পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।” এর পরেই সোমনাথবাবু জানিয়ে দেন, খুব শীঘ্রই হোমের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। আবাসিকদের পালানোর মানসিকতা দূর করাতে তাদের কাউন্সেলিং করানো হবে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, উত্তর দিনাজপুরে অন্য কোনও সরকারি হোম না থাকায় বাধ্য হয়েই সূর্যোদয় আবাসিক হোমে মূক বধিরদের সঙ্গে সাধারণ কিশোর-কিশোরীদের রাখা হয়। সাধারণ ছেলে মেয়েদের জন্য জেলায় পৃথক একটি হোম তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন ওই হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে হোমের পরিকাঠামোর উন্নয়নের আর্জি জানাচ্ছিলেন। হোমের তরফে মূক ও বধিরদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দের স্বার্থে সাধারণ ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক একটি হোম তৈরির দাবিও জানানো হচ্ছিল। হোম থেকে আবাসিক পালানোর ঘটনা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তরফেও সমাজকল্যাণ দফতরে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়। তার পরেই এ দিন দফতরের ডিরেক্টর সোমনাথবাবু হোম পরিদর্শনে যান।
হোম কর্তৃপক্ষ এদিন সোমনাথবাবুর কাছে হোমের বিভিন্ন পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাঁদের দাবি, কর্মীর অভাবে আবাসিকদের উপর ঠিকমতো নজরদারি করা সম্ভব হয় না। হোমের স্কুলটিতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ১৮ বছরের পর মূক ও বধিরদের যাতে সাধারণ হোমে পাঠানো না হয়, তার জন্য তার জন্য হোমের তরফে বার বার রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে মূক ও বধিরদের জন্য হোমে বৃত্তিমূলক স্বনির্ভরতা প্রশিক্ষণ চালুর প্রস্তাব পাঠানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। মূক ও বধির কিশোর ও কিশোরীদের জন্য হোমে দুজন অধ্যক্ষ থাকার কথা থাকলেও শুরু থেকেই হোমে একজন অধ্যক্ষ রয়েছেন। ফলে হোম কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে সমস্যা হচ্ছে।