সালিশিতে ধৃতদের জামিনে ক্ষোভ

মহিলাকে মারধর ও চুল কেটে নেওয়ার ঘটনায় ধৃত তিন মহিলার জামিন হয়ে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মানিকচকের মানুষ। বাকি অভিযুক্তরা অধরা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিগৃহিতরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share:

মহিলাকে মারধর ও চুল কেটে নেওয়ার ঘটনায় ধৃত তিন মহিলার জামিন হয়ে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মানিকচকের মানুষ। বাকি অভিযুক্তরা অধরা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিগৃহিতরা। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারার ঘটনায় পুলিশ খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে। অথচ মানিকচকের মথুরাপুরের করমুটোলা গ্রামের মহিলা ও তার পুরুষ সঙ্গীকে ব্যাপক মারধর করে চুল কেটে নেওয়ার ঘটনায় জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “অভিযোগকারিনীর অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে গ্রামে তল্লাশি চলছে।”

Advertisement

ওই নির্যাতিতা মহিলা তাঁর সঙ্গী আপাতত গ্রামেই রয়েছেন। তাদের উপরে ফের হামলা না হলেও তাদের উদ্দেশ্যে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই বুধবারও তারা আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পাননি। নিগৃহিত যুবক বলেন, “আমাদের আর মারধর করা না হলেও গ্রামের লোকজন আমাদের গ্রাম ছাড়া করা হুমকি দিচ্ছেন। আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না।” বধূটি বলেন, “এখনও বাকি অভিযুক্তদের পুলিশ ধরছে না। যাদের ধরা হয়েছিল তারাও ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি।”

মানিকচকের মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের করমুটোলার এক বধূ গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। সোমবার তারা গ্রামে ফিরে আসার পর ওই রাতেই সালিশি সভা বসানো হয়। তাদের ৫১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাকা দিতে না পারায় দুইজনকেই মারধর দিয়ে মহিলার মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই সালিশি সভায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বাবলু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ভারতী মন্ডলের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৪১,৩২৩ ও ৩২৫ ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এই ধারাগুলি সবই জামিনযোগ্য। জেলার এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা জানান, মহিলাদের বিরুদ্ধে ওই মহিলার চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ হওয়ায় সেটি জামিনযোগ্য ধারা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও পুরুষ এমন ঘটনা ঘটালে তার বিরুদ্ধে ৩৫৪ ধারায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হত।

Advertisement

মালদহ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারী বলেন, “পুলিশ এখন খুবই অসহায়। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো হলে চড় মারলেও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু হয়। আর সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বড় অপরাধও জামিনযোগ্য হয়ে যায়। রাজ্যের মতো জেলা পুলিশও এখন শাসক দলের হাতের পুতুল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “মানিকচকের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনায় পুলিশের কড়া পদক্ষেপ করা দরকার।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন